বুধবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আল্লাহ আসমান-জমিনের সবকিছু মানুষের আয়ত্তে দিয়েছেন

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হক

দেহ ও আত্মার সমন্বয়েও মানুষ পরিপূর্ণতা এবং নিরাপত্তা অর্জন করতে পারে না; পারে না অভীষ্ট লক্ষ্য ও কল্যাণ অর্জন করতে। কেননা দেহ ও আত্মার কল্যাণ এবং উন্নতি-অবনতি নির্ভর করে ভালো-মন্দের বিবেচনার ওপর। ভালো গ্রহণ এবং মন্দ বর্জনের জন্য মানুষের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে বুদ্ধি ও মেধা; এর সাহায্যেই মানুষ কল্যাণের পথ বেছে নিতে এবং অকল্যাণের পথ বর্জনে সক্ষম হয়। এ কারণেই দেহ, আত্মা ও জ্ঞানের সমন্বয়েই মানুষ কামিল হয়। যদি জ্ঞান না থাকে তাহলে মানুষ তাকে পাগল, বোকা ইত্যাদি খেতাব দেয়। তাই জ্ঞানের চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহ যথাবিহিত ব্যবস্থা রেখেছেন। এভাবে সমস্ত ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করে তারপর মানুষ সৃষ্টি করেছেন; যাতে মানুষ প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন না হয়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব সৃষ্টি মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন, ক্ষমতাধীন; সবকিছুর ওপর মানুষের মহত্ত্ব ও প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত।

তিরমিজির এক হাদিসে বর্ণিত, জনৈক সাহাবি রসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করেছিলেন, সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী বস্তু কোনটি? উত্তরে তিনি বলেছেন, জমিন। সাহাবি প্রশ্ন করেন, এর চেয়েও কি শক্তিশালী কোনো বস্তু আছে? রসুল ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, পাহাড়। সাহাবি প্রশ্ন করলেন, এর চেয়েও কোনো শক্তিশালী বস্তু আছে কি? রসুল ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, লোহা। সাহাবি প্রশ্ন করলেন, এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী কোনো বস্তু আছে কি? রসুল ইরশাদ করেন- হ্যাঁ, আগুন। সাহাবি প্রশ্ন করলেন, এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী কোনো বস্তু আছে কি? রসুল ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, পানি। সাহাবি প্রশ্ন করলেন, এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী কোনো বস্তু আছে কি? রসুল ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, বাতাস। সাহাবি প্রশ্ন করলেন, এর চেয়ে অধিক শক্তিশালী কোনো বস্তু আছে কি? রসুল ইরশাদ করলেন- হ্যাঁ, মানুষ। এরপর সাহাবি আর কোনো প্রশ্ন করেননি। গুরুত্বপূর্ণ এ হাদিস থেকে অনেক কিছুই উদ্ভাবন করা সম্ভব, তবে এখানে অন্যতম কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে পর্যালোচনার দাবি রাখে।

ক. স্থূলতা শক্তির মূল উৎস নয়; বরং সূক্ষ্মতাই শক্তি বৃদ্ধির মৌল উপাদান। জমিনের তুলনায় পাহাড়, পাহাড়ের তুলনায় লোহা, লোহার তুলনায় আগুনের স্থূলতা কম, সূক্ষ্মতা বেশি। তাই পর্যায়ক্রমে একটির চেয়ে অন্যটির শক্তি অধিক। জমিনের কম্পন স্থির করতে পাহাড় তার শক্তির পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু এ পাহাড়কে লোহার সাহায্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা যায়। এতে লোহার শক্তি প্রমাণিত হয়। কিন্তু আগুন লোহার তুলনায় অধিক সূক্ষ্ম, তাই সে আপন প্রজ্বলন ক্ষমতায় লোহাকে গলিয়ে দেয়। তার সামনে লোহার অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। তবে পানির সামনে আগুন হার মানে, আগুনের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যায়। পানির এ শক্তি তার সূক্ষ্মতার ফল। কিন্তু অদৃশ্য ও সূক্ষ্মতম বাতাস তার শক্তি প্রয়োগ করে পানিকে অস্থির করে তোলে। বাতাসের প্রতিক্রিয়ায় সমুদ্রের পানি জড়ো হয়ে পাহাড়ের আকৃতি ধারণ করে শূন্যে ভেসে বেড়ায়। কিন্তু মানুষ কী আজব শক্তিশালী সৃষ্টি যে, জমিন, পাহাড়, লোহা, আগুন, পানি, বাতাস সবকিছুর ওপর স্বীয় ক্ষমতা ও প্রাধান্য বিস্তারে সক্ষম। সে জমিনে চাষাবাদ করে, কূপ খনন করে, গর্ত করে আরও কত কিছু করে উপকৃত হয়। পাহাড়কে চুরমার করে কাজে লাগায়। লোহাকে গলিয়ে মেশিন তৈরি করে। আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করে স্বার্থসিদ্ধি করে। আগুনের সঙ্গে পানিকে পাশাপাশি রেখে ইঞ্জিন চালায়। পানি নলে ভরে চার তলা/পাঁচ তলায় নিয়ে বাথরুমের নাপাকি সাফ করে, বিদ্যুৎ তৈরি করে স্বার্থ উদ্ধার করে, বাতাসকে চাকায় ভরে গাড়ি চালায়, বলে ঢুকিয়ে লাথি মারে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আসমান ও জমিনের সবকিছু তোমাদের আয়ত্ত করে দিয়েছি।’

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর