সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

জলজ প্রাণী খাওয়ার বিধান

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

জলে বাস করে অসংখ্য প্রাণী। সমুদ্রে আছে আমাদের জানা অজানা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সমাহার। মাছ, কুমির, ব্যাঙ, কাঁকড়া, কচ্ছপ, অক্টোপাস, শামুক ও ঝিনুক ইত্যাদি সবই জলজ প্রাণী। বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন প্রাণী খেয়ে অভ্যস্ত। আধুনিক জগতের ইসলামী স্কলারদের ভিন্ন ভিন্ন মতামতে সাধারণ মুসলান আজ বিব্রত হচ্ছে। তাই অনুসন্ধিৎসু পাঠক মহলের লক্ষ্যে জলজ প্রাণী খাওয়ার ইসলামী বিধান প্রসঙ্গে সংক্ষেপে লিখার প্রয়াস পাব। জগৎ বিখ্যাত গবেষক ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতানুসারে একমাত্র মাছ ব্যতীত কোনো জলজ প্রাণীই মুসলমানদের জন্য হালাল নয়। জনৈক ডাক্তার মহানবী (সা.)-এর নিকট ব্যাঙ হত্যা করার অনুমতি চাইলে তাকে তিনি ব্যাঙ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। বস্তুত ব্যাঙ খাওয়া বৈধ হলে তা হত্যা করতে তিনি নিষেধ করতেন না। বরং তা আহার করা নিষিদ্ধ হওয়ায় অযথা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। (আহকামুল কুরআন জাসসাস-৪/১৯০)

অপর হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “তোমাদের জন্য দুই ধরনের মৃত জীব ও দুই ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুটি হলো মাছ ও টিড্ডি (মধ্য প্রাচ্যের বিশেষ পঙ্গপাল), আর দুই প্রকারের রক্ত হলো- কলিজা ও প্লিহা। (ইবনে মাজাহ, হা. ৩৩১৪)

কোনো কোনো বর্ণনাতে সাগরের মৃত জীব হালাল বলে উল্লেখ আছে। যাতে মাছের বিবরণ উল্লেখ নেই। (তিরমিজি, হা. ৬৯) তবে উপরোল্লিখিত হাদিসের আলোকে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় সাগরের ওই হালাল জীব হলো মাছ।

কুরআনে কারিমে মোমেনদের পরিচয় হিসেবে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল করে ও নিষিদ্ধ করে যাবতীয় ঘৃণিত বস্তুসমূহ। (আরাফ-১৫৭) যেসব বস্তু অপবিত্র এবং স্বাভাবিক বিবেচনায় খাদ্য হতে পারে না অথবা মানুষের জন্য ক্ষতিকর তা সবই ঘৃণিত ও নিষিদ্ধ বস্তু। হিদায়া গ্রন্থে মাছ ব্যতীত যাবতীয় জলজ প্রাণী ঘৃণিত বলে উল্লেখ করেছে। (হেদায়া : ৪/৩৫৩)

বস্তুত মাছ ব্যতীত অন্যান্য জলজ জীব সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের নিকট ঘৃণিত জীব। অতএব বিচিত্র কোনো মতামতের ভিত্তিতে সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে হালাল বলা সমীচীন হবে না। এ ছাড়া ইসলামী শরিয়তে কোনো বিষয়ে হালাল বা হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহযুক্ত হলে সতর্কতা হিসেবে হারাম গণ্য করাই নিরাপদ নীতিমালা। মাছ ব্যতীত যাবতীয় জলজ প্রাণী হালাল হওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। তাই তা পরিহার করাই ইসলামী বিধান।

লেখক : কলামিস্ট, গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর