বুধবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকাই মসলিন

জিআই স্বীকৃতি দেশের জন্য গর্বের

হারিয়ে যাওয়া ঢাকাই মসলিন আবারও ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৭০ বছর আগে লন্ডনে প্রদর্শন করা হয়েছিল বিস্ময়কর বস্ত্র ঢাকাই মসলিন। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় পৃথিবীর সবচেয়ে মিহি সুতিবস্ত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৪ সালে ঢাকাই মসলিন তৈরির প্রযুক্তি ও পুনরুদ্ধার নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ জন্য বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। পরে গবেষণা কাজের স্বার্থে কমিটিতে যুক্ত করা হয় আরও সাত সদস্য। প্রকল্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুর হোসেনকে। ছয় বছরের প্রচেষ্টায় তাঁরা ঢাকাই মসলিন উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত ফুটি কার্পাস ও উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কারে সক্ষম হন। কাপাসিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয় প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া ফুটি কার্পাস। দেশে ঢাকাই মসলিনের কোনো নমুনা না পাওয়ায় লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামের শরণাপন্ন হন গবেষক দল। লন্ডন থেকে সংগৃহীত মসলিন কাপড়ের ডিএনএ আর সেই তুলার ডিএনএ মিলিয়ে দেখা যায় কাপাসিয়া থেকে সংগ্রহ করা তুলার জাতটি ফুটি কার্পাস। মসলিন তৈরি করার জন্য সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ কাউন্টের সুতার প্রয়োজন হয়। এ সুতা আধুনিক যন্ত্রে নয়, চরকায় কাটতে হবে। গবেষক দল ফুটি কার্পাস দিয়ে মিহি সুতা উৎপাদনের জন্য ৪০ জন তাঁতিকে প্রশিক্ষণ দেন। যার মধ্যে ছয়জনকে বাছাই করা হয় দুই বছরের মধ্যে। মিহি সুতা তৈরি হলেও তা দিয়ে বস্ত্র বানাতে কেউ রাজি হচ্ছিলেন না। ফলে কয়েক ধাপ প্রশিক্ষণ দিয়ে ১৭১৯ সালে বোনা শাড়ির নকশার মতো হুবহু শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হয়। এভাবে উৎপাদিত একটি শাড়ি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হয়। ১০ মাস আগে মসলিনের পাঁচটি নমুনা দিয়ে জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ। গত ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এর ফলে মসলিনের ওপর বাংলাদেশের স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। বাণিজ্যিকভাবে তা উৎপাদনের দ্বারও খুলে গেল। বাংলাদেশ ঢাকাই মসলিনের দেশ- এ স্বীকৃত এখন হবে দুনিয়াজুড়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর