বুধবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

চোর সন্দেহে নির্যাতন

আইন হাতে তুলে নেওয়া নিন্দনীয়

আইন হাতে তুলে নেওয়ার বর্বর মানসিকতা একের পর এক অঘটনের জন্ম দিচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে মানবসভ্যতা যখন উৎকর্ষতার শীর্ষে অবস্থান করছে বলে গর্ব করা হয় তখনো আমাদের দেশে অহরহ আইন হাতে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এরই প্রক্রিয়ায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মালিরচালা গ্রামে সন্ধ্যা রানী নামে এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে কয়েক ঘণ্টা ধরে। এ ব্যাপারে একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম ভূইয়া ও তার দুই ছেলে এবং দুই মেয়েকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলাসূত্রে বলা হয়েছে, আসামি মনিরুল ইসলাম ভূইয়ার ছোট মেয়ের গহনা চুরি হয় কয়েক দিন আগে। এ ব্যাপারে সন্দেহ করা হয় সন্ধ্যা রানীর আট বছরের ছেলে পলাশকে। কারণ আসামির বাড়িতে পলাশের যাতায়াত ছিল। আসামির সন্তানদের সঙ্গে সে খেলাধুলা করত। পলাশকে ধরে এনে মারধর করা হয়। সে গহনা চুরি করে তার মার কাছে দিয়েছে এমন স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। তারপর সন্ধ্যা রানীর বাড়িতে চড়াও হয়ে তার গহনা ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়। গহনা চুরির দায় অস্বীকার করায় তাকে ধরে এনে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। গহনা চুরির সঙ্গে সন্ধ্যা রানীর ছেলে বা তিনি জড়িত কিনা তা যথাযথ তদন্তে উদঘাটিত হতে পারে। এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় না নিয়ে একজন নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালানো কোনো সভ্য সমাজে আশা করা যায় না। মায়ের সামনে তার শিশু সন্তান কান্নাকাটি করলেও তাকে মায়ের দুধ খেতে দেওয়া হয়নি এমন অভিযোগও করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সন্ধ্যা রানীর ওপর নির্যাতনকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে ভাবার অবকাশ নেই। আমাদের দেশে কাউকে সন্দেহ হলেই আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা বলেই বিবেচিত। সন্দেহবশে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে। ঘটছে ডাকাত সন্দেহে চোখ তুলে নেওয়ার মতো বর্বরতাও। আইন প্রয়োগকারীদের ওপর মানুষের আস্থার সংকট এ ধরনের বর্বরতা উসকে দিচ্ছে। যার অবসানে আইন হাতে তুলে নেওয়া অপরাধীদের শাস্তি নির্শ্চিতের পাশাপাশি আস্থার সংকট দূর করার উদ্যোগ নেওয়াও জরুরি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর