শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মুমিনের মর্যাদা অনেক বেশি

মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ

একবার আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) কাবাঘরের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ওগো আল্লাহর ঘর! তুমি কতই না মর্যাদাবান। কত সম্মানের অধিকারী। কিন্তু একজন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তোমার চেয়েও অধিক মর্যাদাবান।’ তিরমিজি। হাদিসটিতে একজন মুমিনের মর্যাদা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রকাশ পেয়েছে। একজন মুমিন-মুত্তাকির মর্যাদা আল্লাহর কাছে সর্বাধিক। এখানে উঁচু-নিচু, সাদা-কালো, ছোট-বড়, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, বংশ-গোষ্ঠী ইত্যাদি ভেদে কোনো তারতম্য নেই।

মিশকাতে বর্ণিত হয়েছে, হজরত জাহের ইবনে হারাম (রা.) নামে এক গ্রাম্য সাহাবি মহানবী (সা.)-কে গ্রামের জিনিস উপহার দিতেন। নবী (সা.)ও তাঁকে শহরের জিনিস উপহার দিতেন। নবী (সা.) বলেন, জাহের আমার গ্রাম্য বন্ধু আর আমি তার শহুরে বন্ধু। রসুল (সা.) তাঁকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন।

জাহের (রা.) দেখতে কিছুটা কুৎসিত ছিলেন। একবার জাহের (রা.) মদিনার বাজারে গ্রাম থেকে আনা জিনিসপত্র বিক্রি করছিলেন। এ সময় নবী (সা.) তাঁকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। জাহের (রা.) নবী (সা.)-কে চিনতে না পেরে বললেন, তুমি কে? আমাকে ছেড়ে দাও। জাহের নবী (সা.)-কে দেখে নিজের শরীর নবী (সা.)-এর শরীরের সঙ্গে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। নবী (সা.) বলতে লাগলেন, এ গোলামকে কে কিনবে? আমি একে বিক্রি করব। জাহের (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রসুল! আমাকে সস্তায় বিক্রি করতে হবে। কারণ আমি চাহিদাহীন অচল পণ্য। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, জাহের! তুমি সস্তা নও। তোমার রবের কাছে তুমি অনেক দামি! মুমিনের মর্যাদা কেবল এতটুকুই নয়। বুখারির দীর্ঘ এক হাদিসের শেষাংশে নবী (সা.) খুব স্পষ্টই বলেছেন, ‘বান্দাদের মধ্যে আল্লাহর এমন কিছু প্রিয় বান্দা আছে তারা যদি শপথ করে কিছু বলে তবে আল্লাহতায়ালা তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করেন।’

কাজেই কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কখনই অবহেলা কিংবা তাচ্ছিল্য করতে পারে না। তাকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার রাখে না। আমাদের কারও জানা নেই আল্লাহর কাছে কার মর্যাদা কতটুকু? এ বিষয়ে আল কোরআনের নির্দেশনা বেশ চমৎকার। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা কাউকে উপহাস করবে না। কেননা যাকে উপহাস করা হচ্ছে সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অন্য নারীকে উপহাস করবে না। কেননা যাকে উপহাস করা হচ্ছে সে উপহাসকারী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অন্যের ওপর দোষারোপ কোরো না এবং অন্যকে খারাপ উপাধিতে ডেকো না। ইমানদারকে খারাপ উপাধিতে ডাকা গুনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারা জালিম।’ সুরা হুজুরাত আয়াত ১১।

মুমিন-মুসলমানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করে না, তাকে অপমানিত করে না এবং তাকে তুচ্ছজ্ঞান করে না।’ মুসনাদে আহমাদ। বুখারির অন্য বর্ণনায় নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার প্রিয় বন্দার সঙ্গে শত্রুতা করবে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা করছি।’ নবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসিকি আর তার সঙ্গে যুদ্ধ করা কুফরি।’ বুখারি।

আল্লাহতায়ালা আমাদের মুমিনের মর্যাদা সম্পর্কে জেনে সে অনুযায়ী তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করার তৌফিক দিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, খতিব ও গবেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর