রবিবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ বন্ড

তপন কুমার ঘোষ

প্রবাসীদের জন্য বিনিয়োগ বন্ড

আমেরিকায় ব্যক্তিগত ভ্রমণে এসে লক্ষ্য করেছি, প্রবাসীদের অনেকেই দেশে নিরাপদ বিনিয়োগের কী সুযোগ আছে সে ব্যাপারে জানতে আগ্রহী। আলোচনাকালে কেউ কেউ ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। বাংলাদেশ বাংকের ওয়েবসাইটে প্রবাসীদের জন্য সরকারি বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধা সম্পর্কিত তথ্য আপলোড করা আছে। বর্তমানে প্রবাসীদের জন্য তিন ধরনের বন্ড প্রচলিত। যথা - পাঁচ বছর মেয়াদি ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, তিন বছর মেয়াদি ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও তিন বছর মেয়াদি ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। সম্প্রতি প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ এটা কার্যকর হয়েছে। এখন এ তিন ধরনের বন্ডে সমন্বিত অর্থাৎ সব মিলিয়ে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা হচ্ছে ১ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এর আগে বিনিয়োগের কোনো ঊর্ধ্বসীমা ছিল না। উল্লেখ্য, বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হলেও মুনাফা/সুদ হার সব ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত আছে। উচ্চ মুনাফার কারণে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড প্রবাসীদের মধ্যে অধিক জনপ্রিয়। দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখা বা বাংলাদেশি ব্যাংকের বিদেশ শাখা অথবা বিদেশে অবস্থিত এক্সচেঞ্জ কোম্পানিসমূহের মাধ্যমে এসব বন্ড কেনা যায়।

ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড :  প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশো™ূ¢ত বিদেশি নাগরিকরা বিদেশে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড কিনতে পারেন। নিজ নামে, মনোনীত ব্যক্তির নামে অথবা বৈদেশিক মুদ্রার বেনিফিশিয়ারির নামে এ বন্ড কেনা যায়। বন্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর। মেয়াদান্তে মুনাফার হার বার্ষিক ১২ শতাংশ। মুনাফা ছয় মাস পরপর তোলা যায়। মুনাফা উত্তোলন না করে মেয়াদ শেষে একসঙ্গে উত্তোলন করলে চক্রবৃদ্ধি হারে মুনাফা পাওয়া যায়। মুনাফার অর্থ বন্ডে বিনিয়োগ করা যায় না। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড মেয়াদপূর্তির আগেও ভাঙানো যায়। এ ক্ষেত্রে মুনাফার হার সময়ভেদে ৮ দশমিক ৭০ থেকে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ। সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করলে মৃত্যুঝুঁকি সুবিধা পাওয়া যায়।

এ জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয় না। বন্ডের নমিনি নিয়োগ করা যায়। নমিনি যে কোনো সময় পরিবর্তন বা বাতিলও করা যায়। বন্ডধারকের মৃত্যু হলে নমিনি বন্ডের বিপরীতে যাবতীয় প্রাপ্য অর্থ উত্তোলন করতে পারেন। বন্ডের ওপর অর্জিত মুনাফা বাংলাদেশে করমুক্ত। বন্ড হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে ডুপ্লিকেট বন্ড ইস্যু করা হয়। মেয়াদপূর্তির পর ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগকৃত আসল টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করে বিদেশে ফেরত নেওয়া যায়। বাংলাদেশি মুদ্র্রা বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তরের সময় ‘বিনিময় হার ঝুঁকি’ আছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। মেয়াদপূর্তির পর বন্ড নগদায়ন করা না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বিনিয়োগকৃত হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড :

প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকরা তাঁদের পাঠানো বৈদেশিক ম্দ্রুার সমমূল্যের মার্কিন ডলারে নিজ নামে এ দুটি বন্ড কিনতে পারেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়ন ছাড়াই কেবল পাসপোর্টের কপি প্রদান করে ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকরা ‘ভিসা আবশ্যক নয়’ সিলসংবলিত পাসপোর্টের কপি প্রদান করে এ বন্ড কিনতে পারেন। এ দুটি বন্ডের বৈশিষ্ট্য প্রায় একই। মেয়াদ তিন বছর। প্রতি ছয় মাস পরপর মুনাফা তোলা যায়। বিনিয়োগকৃত অর্থ ও অর্জিত মুনাফা সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত। মেয়াদপূর্তির আগেও নগদায়ন করা যায়। এ ছাড়া নমিনি নিয়োগ, নমিনি পরিবর্তন বা বাতিল করার বিধানও আছে। ম্তৃ্যুঝুঁকি সুবিধা বর্তমান। মেয়াদপূর্তির পর নগদায়ন করা না হলে মূল অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বিনিয়োগ করার সুবিধাও আছে এ দুটি বন্ডে।

এ দুটি বন্ডের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের আসল অর্থ ও মুনাফা দু-ই বিদেশে ফেরত নেওয়া যায়। কিন্তু ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের ক্ষেত্রে শুধু আসল অর্থ প্রত্যাবাসনযোগ্য। আর এ কারণেই সুদের হারে তারতম্য আছে। ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মুনাফার হার মেয়াদান্তে সাড়ে ৬ শতাংশ। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করা হলে প্রথম বছর শেষে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর শেষে ৬ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যায়। প্রাপ্ত মুনাফা ডলারে অথবা সমমূল্যের বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রদেয়। পক্ষান্তরে ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের ক্ষেত্রে মেয়াদান্তে মুনাফা হার সাড়ে ৭ শতাংশ। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করা হলে মুনাফার হার হবে প্রথম বছর শেষে সাড়ে ৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছর শেষে ৭ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে মুনাফা বিদেশে নেওয়ার সুযোগ নেই।

প্রবাসী বিনিয়োগারীরা চান ঘরে বসে অনলাইনে বিনিয়োগের সুযোগ। প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা পুনর্বিবেচনা করে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন। যেসব বিনিয়োগকারী কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে সঞ্চয় ঝুঁকিতে ফেলতে চান না এবং নির্দিষ্ট হারে রিটার্ন পেলেই খুশি তাদের জন্য প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ নিরাপদ ও লাভজনক।

লেখক : পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন।

সর্বশেষ খবর