শনিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

কৃষি খামারেই শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকা

শাইখ সিরাজ

কৃষি খামারেই শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকা

গত ডিসেম্বরের প্রথম দিকে, শীত মোটামুটি চলে এসেছে তখন। ঢাকায় শীত তেমন অনুভূত না হলেও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভোরবেলায় শীতের আগমনী প্রকোপ বেশ টের পাওয়া যাচ্ছিল। চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন। কুয়াশা ছাপিয়ে পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে। আর কিছুক্ষণ পরই সূর্যের দেখা মিলবে। মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ এলাকা তখনো কর্মমুখর হয়ে ওঠেনি। নিছক প্রয়োজনীয়তা থেকে কেউ কেউ ঘর থেকে বেরিয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে শাঁ চলে যাচ্ছে দ্রুতগতির গাড়ি। গত দিন ফেনীর সোনাগাজীতে মেজর সোলায়মানের বারোমাসি আমের ওপর কাজ শেষে সন্ধ্যা নেমে আসে। রাতটা সেখানে কাটিয়ে ভোরে রওনা হয়ে এখানে এসে অপেক্ষা করছিলাম টুটুলের। তিনি চট্টগ্রাম থেকে আসছিলেন। বলছিলাম নাহার অ্যাগ্রো লিমিটেডের কর্ণধার রকিবুল ইসলাম টুটুলের কথা। বাংলাদেশে যারা আধুনিক প্রযুক্তির দুগ্ধখামার গড়েছেন তিনি তাদের একজন। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই টুটুল এসে হাজির। গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এলেন। বয়স পঁয়তাল্লিশ হবে হয়তো। কিন্তু দেখাচ্ছে তারও কম। দারুণ তারুণ্য তার চলনে-বলনে। সে তারুণ্যের প্রমাণ রেখেছেন তার কাজেও।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে বিশ্বব্যাপী কৃষি উৎপাদনে তথ্যপ্রযুক্তির কার্যকর ও দক্ষতাপূর্ণ ব্যবহারের তৎপরতা চলছে। কৃষিতে শ্রম কমানো ও উৎপাদনব্যবস্থাকে গাণিতিক হিসাবের মধ্যে আনতে তথ্যপ্রযুক্তি রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে প্রাণিসম্পদ খাতে। ইন্টারনেটের সঙ্গে কম্পিউটার কিংবা মোবাইল যুক্ত করে এ খাতের কার্যক্রম পরিচালনায় এসেছে দারুণ সাফল্য। গত কয়েক বছরে দুগ্ধ খামার তথা প্রাণিসম্পদে ইন্টারনেট অব থিংস-আইওটি ব্যবহার নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন আমি প্রচার করেছি। ২০১৬ সালে নেদারল্যান্ডসের ওয়েগিনিংগেন ইউনিভার্সিটির প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা খামারগুলোয় দেখেছি প্রযুক্তি তথা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নানামুখী ব্যবহার। তারপর ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের চুংনামে একটি ডেইরি খামারে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে একটি প্রতিবেদনের কথা আপনাদের হয়তো মনে থাকতে পারে। সেখানকার সবকিছু প্রচলিত খামারের মতোই। বিস্ময়কর বিষয় হলো, খামার পরিচালনায় মানুষ নেই বললেই চলে। কিম নামের একজন খামারি ছোট্ট একটি কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন পুরো খামার। আর বাংলাদেশে দুগ্ধ খামারে ইন্টারনেট অব থিংসের ব্যবহার প্রথম দেখলাম নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চনে মাসকো ডেইরি লিমিটেডে। পরে দেখেছি সূর্যমুখী প্রাণিসেবা নামের একটি প্রতিষ্ঠানে আইওটির সফল ব্যবহার। গত বছর জানুয়ারিতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে স্থাপিত ডাচ্ ডেইরিতেও দেখেছি আইওটির ব্যবহার। দেশে বৃহৎ খামার পর্যায়ে আইওটির সফল ব্যবহারের নজির গড়েছে চট্টগ্রামের নাহার ডেইরি। জোরারগঞ্জে টুটুলের গবেষণা খামার। বিশাল এলাকা নিয়ে চলছে দেশি গরুর জাত উন্নয়নের কাজ। তখনো সূর্যের দেখা মেলেনি। কুয়াশা কেটে আলোর দেখা মিলেছে। ইতিমধ্যে খামারে কর্মতৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। টুটুলকে নিয়ে তার এ গবেষণা খামারটি ঘুরে দেখছিলাম। রেড চিটাগাং আর মুন্সীগঞ্জের দেশীয় জাতের গরুর সঙ্গে কানাডিয়ান হলিস্টন জাতের গরুর সংকরায়ণে বেশি দুধ দেয় এমন একটি জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা তিনি করছেন। বলছিলেন, ‘হলিস্টন জাতের গরু থেকে দুধ পাই ৭০ থেকে ৮০ লিটার। আর দেশি রেড চিটাগাং থেকে ২ থেকে ৩ লিটার। হলিস্টন জাতের গরু আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খায় না। তাই চেষ্টা করছি রেড চিটাগাং বা মুন্সীগঞ্জের গরুর সঙ্গে ক্রস করে এমন একটি জাত উদ্ভাবনের যাতে অন্তত প্রতিটি গরু থেকে দৈনিক ২৫ লিটার দুধ পাওয়া যায়। ‘দেখলাম বিশাল আকারের শেডের নিচে ১০০ রেড চিটাগাং ক্যাটল ও ১০০ মুন্সীগঞ্জ জাতের গাভী পালা হচ্ছে। ১০ বছরের পরিকল্পনায় প্রক্রিয়াটির ইতিমধ্যে পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে সাফল্য আসতে শুরু করেছে। রেড চিটাগাং জাতের গাভী থেকে জন্ম নিয়েছে সংকরায়িত নতুন জাতের ৫৭টি বাছুর। এখানে শুধু গরুর জাত উন্নয়ন নিয়েই কাজ করছেন না টুটুল, দেখলাম বেশ কিছু ছাগলের জাত উন্নয়নের চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু আমাদের আসার উদ্দেশ্য আইওটিনির্ভর খামার দেখা। সেটি জোরারগঞ্জ থেকে মিনিট ত্রিশের পথ। গাড়িতে করে চললাম। ততক্ষণে সূর্য উঠে গেছে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় দিনের প্রথম আলোর ছটক। গাড়িতে বসেই শুনছিলাম টুটুলের শুরুর দিকের গল্প।

‘১৯৮৬ সালে তখন স্কুলে পড়ি। ছোট থেকেই আমার কৃষির প্রতি ঝোঁক। আপনার মাটি ও মানুষের কোনো পর্বই মিস করতাম না। মুরগির খামার গড়ে কিংবা ডেইরি খামারের প্রতিবেদনগুলো বেশ নাড়া দিত আমাকে। স্কুলে পড়তে পড়তেই ৩০০ মুরগি দিয়ে শুরু করলাম ছোট্ট খামার।’ পাহাড়ি পথে চলতে চলতে টুটুলের গল্প শুনছিলাম। পুব দিক থেকে আসা সূর্যের রশ্মি গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে রাস্তায় আলোছায়ার এক খেলা তৈরি করল যেন। আর দেখছিলাম রাস্তার দুই ধারে জনপদ, খেত-খামার। খেতে খেতে শীতের সবজি, ভুট্টা, ফলের বাগান। কৃষিবৈচিত্র্যে পাল্টে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নত হচ্ছে কৃষকের ঘরবাড়ি। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পাকা দালান উঠছে। গত ৪০ বছরের সাংবাদিকতায় বহুবার এ অঞ্চলগুলোয় এসেছি। নিবিড়ভাবে দেখেছি তাদের পাল্টে যাওয়ার চিত্র। টুটুলের কথা থেকে কখন আনমনা হয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাবনায় ডুবে গিয়েছিলাম বলতে পারব না, হঠাৎ পাশ কেটে যাওয়া একটি গাড়ির হর্নের শব্দে মগ্নতা ভাঙল। টুটুল বলছিলেন তার জীবনের গল্প।

‘৩০০ মুরগি কিনে খামার দিলাম। বাঁশ কিনে খাঁচা তৈরি করলাম। আমি তো তখনো স্কুলের ছাত্র! মা-ই দেখাশোনা করতেন। মায়ের নামে খামারের নাম রাখলাম।’ জানতে চাইলাম আপনার মায়ের নাম নাহার, না? বললেন, ‘হ্যাঁ। তখন থেকেই নাহার অ্যাগ্রোর পথচলা। এরপর দুটি গরু কিনে শুরু করলাম ডেইরি খামার। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা। আমাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। সারা জীবন ভেবেছি আমার হারানোর কিছু নেই। ৩০০ মুরগি কেনার টাকাটা থাকলেই হলো। এই ভেবে যে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে ভয় করিনি কখনো।’ কী এক দারুণ প্রত্যয়ের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন টুটুল। টুটুলের কথাই ঠিক, উদ্যোক্তা হতে হলে রিস্ক নিতে হবে। লাভ আর ক্ষতির কিনারায় দাঁড়িয়ে যে ঠিক সিদ্ধান্তটি নিয়ে শ্রম আর অধ্যবসায়ে এগিয়ে যেতে পারে সে-ই সফল হয়। টুটুলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ৩৫ বছরের পথচলায় কৃষিভিত্তিক সুবিশাল কার্যক্রম গড়ে তুলেছেন তিনি। এখন ৪ হাজার কর্মী কাজ করছেন তার বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক খামার ও শিল্পকারখানায়। আর্থিক সাফল্যও বিস্ময়কর। বছরে হাজার-বারো শ কোটি টাকার টার্নওভার।

কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম মিরসরাইয়ের নলকোয়। পাহাড়বেষ্টিত নান্দনিক এক ক্ষেত্র গড়ে তুলেছেন টুটুল। উন্নত বিশ্বের আধুনিক দুগ্ধ খামারের মতোই। আধুনিক শিল্পকারখানার মতোই নিরাপদ ও গোছানো চারপাশ। খামারের প্রবেশমুখে বায়োসেইফটির ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাপনার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করলাম খামারে। পাহাড়ঘেরা বিশাল এ আয়োজন দেখে মনে হলো যেন বিদেশের কোনো কৃষি খামারে এসে পড়েছি! ৩৫ একর জায়গায় বিশাল খামার। সারি সারি শেডে নানা জাতের গরু। টুটুল জানালেন এ খামারে ১ হাজার ২০০ গরু আছে। এর মধ্যে ৭০০ দুগ্ধজাত গাভী। সব গাভীর গলায় অ্যাকটিভিটিস বেল্ট রয়েছে, এর ভিতরেই রয়েছে মাইক্রোচিপস। এ মাইক্রোচিপস-কম্পিউটার বা মোবাইলে পাঠাচ্ছে গাভীর শারীরিক ও পারিপার্শ্বিক সব তথ্য। আধুনিক ও কারিগরি এ বিষয়গুলো পুরোপুরি রপ্ত করে নিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে বিশাল খামারটি। টুটুল ঘুরে ঘুরে দেখালেন সব। গরুর খাবার দেওয়ার চিত্রটি মনে করিয়ে দিল কোরিয়া চুংনামে দেখা খামারটির কথা। সেখানে যন্ত্রের সাহায্যে খাবারের উপাদানগুলো মিশিয়ে সয়ংক্রিয়ভাবে খাদ্য তৈরি করে পৌঁছে দেওয়া হতো খামারে গরুর সামনে। এখানেও সে রকমই প্রায়। খাদ্যভরা ট্যাংক নিয়ে একটা গাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে গরুর খাবার। দক্ষিণ কোরিয়ায় কিমের খামারে যেমনটি দেখেছিলাম- খাদ্য প্রস্তুত, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য সেখানে রয়েছে পৃথক ইউনিট। এখানেও তাই। খাবার মজুদ করে রাখার ব্যবস্থাটিও বিজ্ঞানসম্মত ও সময়োপযোগী। কাঁচা ভুট্টা সাইলেস করে বছরের সব সময় কাঁচা ঘাসের চাহিদা পূরণে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে অনেক পিটে। বড় বড় খামারে প্রাণিসম্পদের জন্য সারা বছরের খাদ্য সংরক্ষণের বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডসের ডো মার্কে গরুর খামারে গিয়ে অবাক হয়েছিলাম। আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময়কর ব্যবহার খামারটিকে দিয়েছিল অন্য রূপ। দেখে মনে হচ্ছিল গরুর খামার নয় যেন কোনো এক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চলে এসেছি। ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি কৃষিতে যে বৈপ্লবিক রূপান্তর আনতে যাচ্ছে তখনই অনুধাবন করেছিলাম। স্মার্ট প্রযুক্তি মানে মুহূর্তেই সব তথ্য পাওয়া যায় হাতের মুঠোয়। গরুর খাদ্য দেওয়া থেকে শুরু করে দুধ সংগ্রহ পর্যন্ত সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় যান্ত্রিক উপায়ে। স্মার্ট ফার্ম ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি গরুর জন্য একটি করে চিপ থাকে। চিপটি সাধারণত গলার কলারে বা কানে ট্যাগ লাগানো থাকে। এটি এমন একটি চিপ যা গরুর শারীরিক ও পারিপার্শ্বিক সব ধরনের তথ্যই সংগ্রহ করতে সক্ষম। যেমন গরুর দেহের তাপমাত্রা, রক্ত সঞ্চালন, জাবরকাটা থেকে শুরু করে প্রজনন সময়ের নির্ভুল হিসাব দেয়। মাতৃগরুর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য দিয়ে অসময়ের গর্ভপাত রোধ করতে সাহায্য করে। গরুর কী ধরনের পুষ্টির প্রয়োজন, কী পরিমাণ আলো-বাতাস লাগবে, এমনকি গাভীর দুধ দেওয়ার সময় সম্পর্কেও নানা তথ্য খামারি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত বেজ স্টেশন থেকে সরাসরি মোবাইল ফোনে পেতে পারে। ডো মার্কের আধুনিক দুধ দোহানোর পদ্ধতিও চমকপ্রদ। সেখানে গাভী উন্মুক্ত বিচরণ করতে করতে নিজেই যখন উপলব্ধি করে তার দুধ দেওয়ার সময় হয়েছে, তখন লাইন ধরে দুধ দোহানো কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। শুধু গাভীর উপলব্ধি দিয়ে যন্ত্র সন্তুষ্ট হয় না, যন্ত্র যখন তার হিসাব দিয়ে উপলব্ধি করবে যে দুধ দোহানোর জন্য গাভী প্রস্তুত তখনই সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুধ দোহানো শুরু করবে। অন্যথায় নয়। টুটুলের খামারে এসে দেখি সে একই চিত্র। আর সব স্মার্ট খামারের মতোই টুটুলের খামারেও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে দুধ দোহানের প্রতিটি কাজ যান্ত্রিক উপায়ে চলে। দুধ দোহানোর সময় উপলব্ধ হলে গরু সারি ধরে আপনা-আপনি চলে যাচ্ছে মিল্কিং পারলারে। মিল্কিং পারলারে প্রবেশের আগে স্বয়ংক্রিয় সেন্সরে চালু হয় শাওয়ার চ্যানেল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সারি ধরে এক এক করে গাভী প্রবেশ করে মিল্কিং পার্কে। সেখানে অটোমেশিনে চলে দুগ্ধ দোহন। গাভীর ওলানে মেশিন বসানোর আগে কঠোরভাবে মেনে চলা হয় বায়োসেইফটি। জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ওলান পরিষ্কার করে টিস্যু দিয়ে মুছে তবেই দুধ দোহানো হয়। কারণ ম্যাস্টাইটিস বা ওলান ফোলা রোগ নিয়ন্ত্রণে এর চেয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। মনে পড়ছে বেলজিয়ামের ম্যাস্টাইটিস ম্যানেজমেন্ট নামের এক প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা দেখার সুযোগ হয়েছিল। আমাদের গ্রামের কৃষকও দুধ দোহানোর আগে গাভীর ওলান পরিষ্কার করে নেয়। এটি খুব ভালো চর্চা। যা হোক, টুটুল জানালেন প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার লিটার দুধ পাওয়া যায়। সরাসরি দুধ বাজারজাত ছাড়াও দুগ্ধজাত নানা পণ্য তৈরির ব্যবস্থাও রয়েছে তার খামারে।

খামারের সবকিছুই স্বয়ংক্রিয় উপায়ে সম্পন্ন হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও যান্ত্রিক। অটোমেশিনে গোবর পরিষ্কার করে সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পরে সে গোবর থেকে তৈরি হচ্ছে জৈবসার। বিশাল খামারটিতে কাজ করছেন মাত্র ৬০ জন কর্মী। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর না হলে ২০০ জনেও এ বিশাল খামারের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হতো না, বলছিলেন ফার্ম ইনচার্জ ডা. সেলিম রেজা।

খামারটিতে বাছুর লালনপালন বা তদারকি লক্ষ্য করার মতো। একটি সুস্থ বাছুরই সুন্দর গরুর জাত ধারণ করে, এমন ভাবনা মাথায় রেখে বাছুরের শতভাগ যত্ন নিশ্চিত করছেন তারা। বছরে ৫০০ থেকে ৬০০টি পর্যন্ত বাছুর পাওয়া যায়। খামারে মূল লাভও আসে এ বাছুর থেকেই।

খামার ঘুরে দেখা শেষ হলে টুটুল তার খামারের দুধ থেকে তৈরি দই খাওয়ালেন। সেও এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। রকিবুল ইসলাম টুটুলের কৃষি উদ্যোগের বয়স ৩৪ বছর। শুরুতে তিনি যেমন সময়ের চাহিদাকে অনুসরণ করেছেন, এখনো ঠিক সারা বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি নিয়েই এগিয়ে নিচ্ছেন খামারের কাজ। তার প্রতিটি কাজের ভিতর দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আন্তরিকতা ও যতটা সম্ভব শুদ্ধতা অনুসরণ করেন। তিনি মনে করেন এর ভিতর দিয়েই পাচ্ছেন কাক্সিক্ষত সাফল্য। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০২০- এ ৩৪ বছরে তার কাজের প্রতি নিষ্ঠা, একাগ্রতা, সর্বোপরি নিজের কাজটির প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কারণে এ সফলতা। টুটুলের মতো সফল ও বড় উদ্যোক্তাদের হাত ধরে অনেক নতুন উদ্যোক্তা গড়ে উঠবেন, তার সফলতা আরও বহু মানুষের সাফল্যে ভূমিকা রাখবে- এ প্রত্যাশা।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।  

[email protected]

সর্বশেষ খবর