শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সাহাবিদের মধ্যে রসুলের গুণ প্রতিফলিত হয়েছে

আল্লামা মাহমূদুল হাসান

সাহাবিদের মধ্যে রসুলের গুণ প্রতিফলিত হয়েছে

নামাজের ব্যাপারে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নামাজই আমার প্রকৃত শান্তি এবং তৃপ্তির অন্যতম উপায়।’ কেননা তিনি নামাজে তার রবের সঙ্গে কথাবার্তায় মনোযোগী হতেন। সাহাবিদের মধ্যে তাঁর এ গুণের প্রতিফলনের কথা উল্লেখ করে কোনো এক সাহাবি বলেন, তারা রাতের আঁধারে আল্লাহর ইবাদতে আর দিনের বেলায় দীনি কর্মকান্ডে নিমগ্ন থাকেন। হজরত ওসমানের শাহাদতের পর কোনো ভক্ত ও অনুরাগী তাঁর চরিত্র সম্পর্কে অবগতির জন্য তাঁর স্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর করেন, ‘যিনি অর্ধ পৃথিবীর রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও ইশার নামাজ বাদ দুই রাকাত নামাজে পবিত্র কোরআন খতম করতেন তাঁর সম্পর্কে কী জানতে চাও? রসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তোমাদের পরিবারের কাছে উত্তম।’ স্ত্রীর এ উক্তি নামাজের প্রতি হজরত ওসমানের অনুরাগের নিদর্শন বহন করে। তাঁর এ অনুরাগের কারণেই তিনি ছিলেন ইমানি হায়া ও লজ্জার প্রতীক। রসুল (সা.)-এর এ গুণ সব সাহাবির জীবনেই প্রতিফলিত হয়। কিন্তু রসুল (সা.) বলেছেন, ‘হজরত ওসমান ইমানি লজ্জার সর্বাধিক অধিকারী।’ সুরা ফাত্হর ২৯ নম্বর আয়াতে ফজল অর্থাৎ অনুগ্রহ কামনার একমাত্র স্থলের বর্ণনা করা হয়েছে। রসুল (সা.) কেবল আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করতেন। ইহকাল-পরকাল উভয়ের বেলায় কেবল আল্লাহর সাহায্যই কামনা করতেন অন্য কারও মুখাপেক্ষী হতেন না, নতশির হতেন না। এ কারণেই হক এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাকে কারও পরোয়া করার প্রয়োজন হতো না। কারও অনুগ্রহ বাধার কারণ হতো। সাহাবিদের প্রত্যেকের মধ্যে ছিল এ গুণের ছাপ। তবে স্বয়ং রসুল বলেছেন, ‘আলী সর্বাধিক ন্যায়বিচারক।’

এ প্রসঙ্গে ইবনে মাসউদের একটি ঘটনার প্রতি নজর দেওয়া যায়, যিনি মস্ত বড় সাহাবি ছিলেন। হাদিসের আলোকে তাঁকে ওইসব সাহাবির অন্তর্ভুক্ত মনে হয়, যারা দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদলাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। তিনি যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত তখন হজরত ওসমান (রা.) তাশরিফ আনেন এবং কুশলাদি জিজ্ঞেস করে বলেন, আপনার অস্থিরতার কারণ কী? তিনি উত্তর করেন, আমার গুনাহের অনুভূতি আমাকে অস্থির করে ফেলেছে। ওসমান প্রশ্ন করলেন, আপনি কী কামনা করেন? তিনি উত্তর করেন, আল্লাহর রহমতই আমার একমাত্র কামনা। ওসমান বললেন, আপনি অসুস্থ, আমি কি আপনার জন্য ডাক্তার নিয়ে আসব? তিনি উত্তর করেন, যিনি প্রকৃত ডাক্তার তিনিই তো আমাকে রোগ দিয়েছেন। ওসমান বললেন. আপনার জন্য আমি কিছু আর্থিক সাহায্য করতে চাই। তিনি উত্তর করলেন, আমার অভাব-অভিযোগের কথা আমি প্রিয় নবীকে জানিয়েছিলাম। তিনি আমাকে দৈনিক সুরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াতের অজিফা দান করেন। আমি আমার পরিবার-পরিজন নিয়ে এ অজিফা আমল করি। ফলে আমার কোনো অভাব নেই।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর