রবিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
বিচিত্রতা

সুরমা নদী

বরাক নদ ভারতের আসাম রাজ্যের কাছাড় জেলার অমলশিদ নামক স্থান হয়ে সিলেটের সীমান্তবর্তী গ্রাম বদরপুরে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি পৃথক শাখায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর উত্তর দিকের শাখাটি সুরমা নামে প্রথমে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে পরে দক্ষিণ-পশ্চিমে সিলেট শহর অভিমুখে প্রবাহিত হয়েছে। সিলেট অতিক্রম করে এটি উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমে সুনামগঞ্জ শহরের দিকে ধাবিত হয়েছে। সেখান থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পরে দক্ষিণে মদনা নামক স্থানে। এখানে বরাক নদের অন্য শাখা কুশিয়ারার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এ নদীর ধারায় মেঘালয় মালভূমির দক্ষিণ থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদ-নদী ও স্রোতধারা মিলিত হয়েছে। পুব থেকে পশ্চিমে এগুলো হলো লুভা, হরি (কুশিয়া), গোয়াইন গাং (চেঙ্গের খাল), পাইয়ান, বোগাপানি, জাদুকাটা, সোমেশ্বরী ও কংস। বর্ষা মৌসুমে সুরমা বন্যাপ্রবণ। সাধারণভাবে বন্যা মৌসুমের সময়সীমা মের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ সময় নদ-নদীতে গড় পানি অপসারণের পরিমাণ ৩০ হাজার কিউসেক। ১৯৫০ থেকে ’৫৮ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন অপসারণ রেকর্ড করা হয়েছে ৫৩.০০৮ কিউসেক (১৫ আগস্ট, ১৯৫৮) ও ৪৮৭ কিউসেক (২১ মার্চ, ১৯৫৪)। মোহনগঞ্জের দক্ষিণে সুরমা দুটি শাখায় বিভক্ত এবং সামান্য দূরে কংস নদ এর সঙ্গে যুক্ত হয়। আরও দক্ষিণে মগরা নদী সুরমার সঙ্গে মিলিত হয়। নদীর উচ্চতর গতিপথে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী খাতটি ধনু, মধ্যবর্তী পর্যায়ে বাউলাই ও নিম্নতর পর্যায়ে ঘোরাউত্রা নামে পরিচিত। নদীটি নিম্নতর পর্যায়ে কুলিয়ার চরের কাছে মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বরাক নদের দক্ষিণ শাখা কুশিয়ারা নামে মৌলভীবাজার শহরের উত্তরে মনু নদে পতিত হয়েছে এবং উত্তরাভিমুখী দুটি নদী খাতে বিভক্ত হয়েছে, যার একটি বিবিয়ানা, অন্যটি পুনরায় মূল নদ বরাকের নামে পরিচিত হয়েছে। বিবিয়ানার নিম্নতর গতিপথে নাম পরিবর্তিত হয়ে কালনী নদী নামে পরিচিত হয় এবং আজমিরীগঞ্জের কাছে সুরমার সঙ্গে মিলিত হয়। বরাক নদ (পশ্চিম) ত্রিপুরা পাহাড় থেকে নেমে আসা গোপলা ও খোয়াইয়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে মদনায় সুরমায় পতিত হয়েছে। সুরমা নদী প্রণালির অধিকাংশই হাওর অববাহিকায় পতিত, যেখানে নিষ্কাশন রেখা স্পষ্ট ও সুনির্ধারিত নয়। দুর্গাপুর থেকে জৈন্তিয়াপুর পর্যন্ত বিস্তৃত পর্বত পাদদেশীয় ভূমিতে অধিকাংশ স্রোতধারা ও নদী খাত বর্ষা মৌসুমে উপচে পড়া পানিতে প্লাবিত হয় এবং বিস্তৃত পানি হাওরের সঙ্গে নদীর সংযোগ সৃষ্টি করে। হাওর অববাহিকায়ও নদীগুলো উপচে পড়ে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই হাওরগুলো পরিপূর্ণ হয় এবং মৌসুমি বৃষ্টিপাত হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পানি পূর্বের স্থানে অর্থাৎ নদীর মূলধারায় ফিরে আসে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর