বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মাতৃভাষা মহান আল্লাহর নিয়ামত

মো. আবু তালহা তারীফ

মাতৃভাষা মহান আল্লাহর নিয়ামত

মাতৃভাষা সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে এক অসাধারণ নিয়ামত। ভাষা যে কতটা নিয়ামত তা একমাত্র কথা বলতে না পারা ব্যক্তিরা বুঝতে পারবে। এ জগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ, মাতৃভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। বস্তুত ভাষার ব্যবহার মুখে বলা বা কলমে লেখা দুই ভাবেই হয়। মানব জাতি দুই ভাবেই ভাষা প্রয়োগের ক্ষমতা পেয়েছে। আল্লাহর সব নিয়ামতের সঙ্গে মাতৃভাষারও কদর করার কথা বলেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে ভাব (ভাষা) প্রকাশ করতে শিখেয়েছেন।’ সুরা আর রাহমান আয়াত ৩-৪।

পৃথিবীর সব জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ ভাষা রয়েছে। এ ভাষা তাদের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা, স্বপ্নের ভাষা এবং জীবনযাপনের ভাষা। মায়ের কাছ থেকে এ ভাষা শেখে বিধায় এর নাম মাতৃভাষা। এ পৃথিবীতে ৬ হাজারের অধিক ভাষার অস্তিত্ব আছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তার নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি, ভাষা ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য। নিশ্চয়ই এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ সুরা আর রুম আয়াত ২২।

মানবশিশু দুনিয়ায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শির কাছ থেকে যে ভাষা শোনে এবং তাদের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলে তাই তার মাতৃভাষা। মাতৃভাষা মানুষের মনের ভাব প্রকাশের সর্বোত্তম মাধ্যম। মাতৃভাষার মাধ্যমে সহজে মানুষকে যা বোঝানো যায় তা অন্য ভাষায় বোঝানো যায় না। আল্লাহতায়ালা প্রতি জাতির স্বীয় মাতৃভাষাকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে স্ব স্ব জাতির নিজস্ব ভাষায় আসমানি কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। হজরত মুসা (আ.)-এর সম্প্রদায়ের ভাষা ছিল হিব্রু, তাই সে ভাষায় তাওরাত কিতাব নাজিল করা হয়েছে। হজরত দাউদ (আ.)-এর সম্প্রদায়ের ভাষা ছিল ইউনানি তাই জাবুর সে ভাষায় নাজিল হয়েছে। হজরত ঈসা (আ.)-এর উম্মতের ভাষা ছিল সুবিয়ানি তাই এ ভাষায় ইনজিল কিতাব নাজিল হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের মাতৃভাষা ছিল আরবি তাই কোরআন তাঁর মাতৃভাষা আরবিতে নাজিল হয়েছে। মাতৃভাষার শিক্ষা ও বিকাশে অকুণ্ঠ সমর্থনে মহান আল্লাহর বাণী সহজ, সুন্দর, সাবলীল ও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য সংশ্লিষ্ট জাতির ভাষাভাষী করে রসুলদের পাঠানো হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক রসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ সুরা ইবরাহিম আয়াত ৪।

মানবজীবনে সৌন্দর্যের অন্যতম দিক হলো তার ভাষা। ভাষার মাধ্যমে বিকশিত হয় তার ব্যক্তিত্বের শোভা ও সৌরভ। ব্যক্তির শব্দ ও বাক্য তার রুচি ও রোধের পরিচায়ক। তার চিন্তা ও চেতনার স্ফূরক। তার কথামালা ধারণ করে তার মন ও মননের রং। তাই ইসলাম মানুষকে নির্দেশ দেয় পরিশুদ্ধ জীবনে শুদ্ধ কর তোমার শব্দবাক্য ও মধুর কর তোমার বাচনভঙ্গি। তুমি যদি জয় করতে চাও মানুষের মন, পেতে চাও মানুষের মনোযোগ তোমাকে জানতে হবে শব্দ বাক্যের রসায়ন কথার জাদু। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিছু কথা জাদুময়।’ বুখারি।

 

            লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর