শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

গণতন্ত্র নেই, গণতান্ত্রিক আন্দোলনও নেই

নূরে আলম সিদ্দিকী

গণতন্ত্র নেই, গণতান্ত্রিক আন্দোলনও নেই

দেশ আজকে সকরুণ নিস্তব্ধতার অতল গহ্বরে। প্রকৃত অর্থে এক ব্যক্তি বা একদলীয় শাসন দ্বারা দেশ পরিচালিত হলেও দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া হিমশীতল। কোনো উত্তেজনা নেই, কোনো প্রতিবাদ নেই, মিছিলে মিছিলে নগরীর রাজপথ প্রকম্পিত হয় না, রাজপথের মিছিলে মানুষের মুখ ভিসুভিয়াসের মতো জ্বলে ওঠে না। মিছিলই তো নেই, তাই মুষ্টিবদ্ধ হাত জ্বলে উঠবে কোথা থেকে? এ যেন নীরব, নিথর, নিস্তব্ধ বাংলাদেশ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গণতন্ত্রের আবহমান স্রোতধারায় দেশ চলছে। এখানে কোনো দুর্নীতি নেই, অন্যায়-অবিচার নেই, পক্ষপাতিত্বের কলঙ্ক নেই। রাজনীতিকে গোষ্ঠীগত করার কোনো অন্যায় অভিলাষ নেই। রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে ক্ষমতায় টিকে থাকার অভিলাষের যেন লেশমাত্র নেই। দেশের সার্বিক জনগণকে বেদনাহত চিত্তে ম্লান মূক মুখে শত অন্যায়, অবিচার ও পক্ষপাতিত্বকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখতে হচ্ছে না। সব অধিকার ও মূল্যবোধ যেন জনগণের মনের দুয়ার ডিঙিয়ে হৃদয়ের সিংহাসনে মহাসমারোহে অধিষ্ঠিত। জীবনসায়াহ্নে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে এ কঙ্কালসার রাজনীতির নিদারুণ দুরবস্থা অবলোকন করতে হবে, ৭০ বছরের আগে আমরা কেউ কখনো ভাবিনি।

দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে অর্জিত পাকিস্তানে পাঁচ মাস যেতে না যেতেই ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি এক স্বর্ণালি ঊষালগ্নে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবির মেখে ছাত্রলীগের জন্মের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে মহাসমারোহে। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর ঘোষণার প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের কণ্ঠে সেই যে প্রতিবাদী আওয়াজ উঠেছিল, তাই পরবর্তীতে বজ্রনির্ঘোষে গর্জে ওঠে নানা বিচিত্রধর্মী অর্থবহ স্লোগানে। জয় বাংলা থেকে শুরু করে পদ্মা মেঘনা যমুনা তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনার ঊর্মি ছাত্রলীগের কর্মী, এ মাটি আমার সোনা আমি করি তার জন্মবৃত্তান্ত ঘোষণা, সে কবির বাণী লাগি কান পেতে আছি যে আছে মাটির কাছাকাছি, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’- এসব কালজয়ী স্লোগান মিছিলে মিছিলে ধ্বনিত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের অশান্ত ঢেউয়ের মতো আছাড় খেতে খেতে স্রোতের ফেনিল চূড়ায় সৈকতে এসে সগৌরবে আছড়ে পড়ে। বাঙালি জাতির এ গৌরব, মিছিলে মিছিলে মুখরিত দেশ জাগ্রত জনতার উদ্গত উদ্যত উদ্ধত চেতনা শুধু তদানীন্তন পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে শঙ্কিতই করেনি, পর্যুদস্তই করেনি, ওই স্বৈরাচারী শক্তিকে শুধু আত্মসমর্পণে বাধ্যই করেনি, বরং সারা বিশ্বকে ভাবতে শিখিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা বাঙালি হিসেবে এতটাই উজ্জীবিত, এতটাই উদ্ভাসিত যে, তার বিকীর্ণ অগ্নিকণায় শুধু তখনকার ৫৪ হাজার বর্গমাইলের পূর্ব পাকিস্তানকেই নয়, সারাটা বিশ্বের সমগ্র জনপদকে উদ্দীপ্ত করতে পারে, উদ্ভাসিত করতে পারে, উজ্জীবিত করতে পারে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের সেই স্বর্ণালি আলোকচ্ছটা নির্যাতন-নিগ্রহের ঘোর অমানিশার অন্ধকার কাটিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে পথ দেখিয়েছে। আর সেই পথ বেয়ে অযুত মানুষ সমস্ত নিগ্রহ নির্যাতনকে উপেক্ষা করে স্বাধীনতার চেতনাকে বক্ষে লালন করে তার দীপ্ত মন্ত্রে সাফল্যের পতাকা উড়িয়েছে।

মাতৃভাষার অধিকারকে ভিত্তি করে চালিত রথ কেবল বর্ণমালার বিজয়কে অর্জন করেই স্তব্ধ হয়ে যায়নি, বরং গোটা জাতিকে স্বাধীনতার সৈকতে পৌঁছে দিয়েছে। বিজয়ের গৌরবগাথায় শুধু মাতৃভাষার অধিকার অর্জিত হয়নি, রাজনীতির অকুতোভয় সেনাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সুতীক্ষè দূরদর্শিতা ও দিকনির্দেশনায় ’৫৪-এর নির্বাচনে অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে। ইস্কান্দার মির্জা, গোলাম মোহাম্মদ ও আইয়ুব খানের মতো সূক্ষ্ম কূটিল ষড়যন্ত্রকারীদের ’৫৮-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে সামরিক শাসন জারি থেকে শুরু করে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতাকে টপকে একেকটি আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মধ্য দিয়ে জাতিকে ক্রমান্বয়ে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের পথপরিক্রমণের সম্মুখভাবে নির্ভীকচিত্তে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করে।

১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর সুদূর বৈরুতের নিভৃত কক্ষে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর রহস্যময় মৃত্যুর পর যে আন্দোলনের পতাকা ধরার ধুলায় লুটিয়ে পড়তে পারত, বাংলা মায়ের দুরন্ত দামাল সন্তান শেখ মুজিব সেই পতাকা হাতে তুলে নেন। তাঁর উদ্দীপ্ত বক্ষে ছিল হিমাচলের মতো অটলতা, মধ্যাহ্নের সূর্যরশ্মির মতো প্রখরতা এবং সীমাহীন সাগরের অতলান্ত গভীরের প্রশান্ত হৃদয়ের প্রগাঢ়তা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তাঁর মাজারের পাশে অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় তখনকার শেখ মুজিব তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি আমাদের কাছ থেকে চলে গেলেও তাঁর অসমাপ্ত কর্মযজ্ঞের দায়িত্বভার আমরা স্কন্ধে তুলে নিলাম। নেতা, তুমি শান্তিতে ঘুমাও।

তখন স্বৈরাচার ছিল, বিরোধী দলও ছিল। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনও ছিল। এখন কিছুই নেই। ’৫৮ সালে পাকিস্তানে একটি সর্বজনীন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল এবং ওই নির্বাচনটিকে অর্জন করতেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবসহ অন্য গণতন্ত্রমনা নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী কর্মকান্ডে আন্দোলনের পটভূমিকা সুদৃঢ়ভাবে বিনির্মাণ করেন। এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের মূল কারিগর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন ’৫৮-এর নির্বাচন এলেই পশ্চিম পাকিস্তানি সব কূটিল ষড়যন্ত্রকে ভোটযুদ্ধের মাধ্যমে ছিন্নভিন্ন করা যাবে, পর্যুদস্ত ও পরাস্ত করা সম্ভব হবে। ’৫৮ সালের সামরিক শাসন তাঁর কাছে শুধু অনভিপ্রেতই ছিল না, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ছিল। ’৫৮-এর সামরিক শাসন গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি ভয়াল দানবের রূপ পরিগ্রহ করে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবসহ প্রায় সব প্রথিতযশা নেতৃত্বকে ‘এবডো’ করা হয়; অর্থাৎ তাদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। শেখ মুজিবসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগ, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির অসংখ্য নেতাকে কারারুদ্ধ করা হয়। মারাত্মক সরকারি প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সামরিক শাসন জারির যৌক্তিকতা সরল জনগোষ্ঠীকে তারা অনেকটা পোষ মানিয়ে ফেলে। আইয়ুব খানের শক্তি-সামর্থ্যকে এ পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ দিতে থাকে। পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় এবং রাজনীতিতে দোর্দ- প্রতাপ অর্জন করে আইয়ুব খান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবকেও গ্রেফতার করে ফেলেন। সম্ভবত এটাই আইয়ুবের কাল হয়ে দাঁড়ায়। এর পাশাপাশি তার জন্য আরেকটি অভিশাপ এসে দাঁড়ায়, সেটি হলো, হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন (যদিও তার মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয় কল্যাণকর ছিল)। ছাত্রসমাজ হামুদুর রহমান কমিশনকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করে যে আন্দোলনের সূত্রপাত করে, সে আন্দোলনই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মুক্তি, মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচন বাতিল ও হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে প্রচন্ড শক্তি নিয়ে সম্মুখপানে এগিয়ে যায়। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো মোনায়েম খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর বানালে, সেটি আন্দোলনের অগ্নিকুন্ডে ঘি ঢালার মতো প্রণোদনার সৃষ্টি করে।

নতুন প্রজন্মের সম্মুখে অতীতের বিস্তীর্ণ ইতিহাসের এ ক্ষুদ্র অংশটি তুলে ধরার মূল লক্ষ্য হলো- এটি প্রমাণ করে যে, আমরা তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীরা পাকিস্তান আন্দোলনে প্রভূত অবদান রাখলেও চিন্তা-চেতনা, মননশীলতা ও মননে তারা ছিল নিখাদ বাঙালি। বাংলার বর্ণমালা, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তখনকার পূর্ব পাকিস্তানিদের মনে এতটাই প্রগাঢ় ও গভীর ছিল যে, উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর ঘোষণা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে শুধু বিতর্কিতই করেনি, তাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার সাহস জুগিয়েছে। পরবর্তীতে নাজিমউদ্দিন সাহেব উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার অভিলাষ ব্যক্ত করলে বিক্ষুব্ধ বাঙালি সত্তা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিত হয়। ভাবলে বিস্মিত হতে হয়, আমাদের পূর্বসূরিরা সেদিন যে অকুতোভয় সাহস দেখিয়েছেন, নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের যে পথ তাঁরা বিনির্মাণ করেছেন, বুক চিতিয়ে যে নির্যাতন-নিগ্রহকে তাঁরা সহ্য করেছেন এবং বীর সেনানীর মতো সব ষড়যন্ত্রকে পরাভূত করার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন, তা বিস্ময়কর ও পৃথিবীতে অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত।

’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি বা ৮ ফাল্গুনে পাকিস্তানিদের ছুড়ে দেওয়া বুলেট বরকত, সালামদের বক্ষ বিদীর্ণ করে যে লাল টকটকে রক্ত বাংলার মাটিকে সিক্ত করে, তা আজও পৃথিবীর আন্দোলনের ইতিহাসে একটি অবর্ণনীয় ও একান্তই অদ্বিতীয় ঘটনা। মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের কোনো দেশেই এরূপ আত্মত্যাগের ইতিহাস সৃষ্টি হয়নি। সারা পৃথিবীতে বাঙালির এ চেতনা অনন্যসাধারণ ঘটনা বলেই ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমি আবারও বলি, আমাদের পূর্বসূরিদের সেদিনের বিনির্মাণ করা পথে অবিচল ধারায় হেঁটে আমাদের প্রজন্ম ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানের পতাকা বর্জন করে আমাদের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের দুর্দান্ত সাহস দেখায়। সেদিন আমাদের ওপর কামানের গোলা বর্ষিত হতে পারত, বোমারু বিমানে আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা বর্ষিত হতে পারত, নিমিষেই লাখ লাখ প্রাণের প্রদীপ একটি দমকা হাওয়ায় নিভে যেতে পারত। এসব আমাদের হৃদয়ের আশঙ্কার মধ্যে থাকলেও আমরা বিন্দুমাত্র শঙ্কিত হয়ে পিছু হটিনি। পিছু না হটাটাই বাঙালির ঐতিহ্য। সব নির্যাতন বুক পেতে সহ্য করে অধিকারের পতাকাটিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরাই আমাদের বৈশিষ্ট। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মাস্টারদা সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, হাজী শরিয়তুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখের অবদান আমরা কখনই বিস্মৃত হতে পারব না। শুধু বিস্মিত হই আজকে জাতির এ নীরবতা দেখে। যেখানে বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই; দুর্নীতি, গোষ্ঠী রাজনীতি, রাজনীতিকে ব্যক্তিতান্ত্রিকতার আঁচলে বাঁধার অপপ্রয়াসের উদগ্র চেষ্টার কোনো বিরোধিতা নেই। দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, এমনকি বিরোধী দলের গতিবিধিও আজকে ক্ষমতাসীনের অঙ্গুলি নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে।

যখন শুনি, ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীও অভিলাষ ব্যক্ত করছেন, ‘গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন’- বাঙালির এ অভূতপূর্ব লজ্জা রাখব কোথায়! একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তার হৃদয়ের দর্পণে প্রতিভাত হয়েছে, সম্পূর্ণ দেশটি একক নেতৃত্বে চললে সেখানে গণতন্ত্রের কোনো এসেন্স থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আমৃত্যু সংগ্রাম ও সাধনা করেছেন পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। সেই প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় তাঁরই দুই সুযোগ্য শিষ্য মানিক ও মুজিব গণতান্ত্রিক অধিকারের পথ বিনির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হতে অনুপ্রাণিত করেছেন। এ অনুপ্রেরণার উৎস ধরেই শেখ মুজিব ছয় দফার মাধ্যমে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার আন্দোলনে এগিয়ে আসতে দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখান।

বাঙালি চেতনার ধারক, বাহক ও বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে আস্থাভাজন সংগঠন ছাত্রলীগ। যার চিন্তা-চেতনা, মনন ও ভাবনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবির মাখানো ছিল। তারাই এগিয়ে এসে ছয় দফাকে স্বাধীনতার উপক্রমণিকা হিসেবে গ্রহণ করে। আমার বিনীত নিবেদন, এ দেশে সব রাজনৈতিক আন্দোলনে তো বটেই, সব জাতীয় সংকটে ছাত্রসমাজই দৃপ্ত পদক্ষেপে সামনে এগিয়ে এসেছে সংকট কাটিয়ে নির্যাতনের বক্ষ বিদীর্ণ করে সাফল্যকে ছিনিয়ে আনার জন্য।

আজকে অবশ্য সময়ের দাবি অনেকটাই ভিন্নরকমের। জাতির সব সাফল্য বিনির্মাণে ছাত্রসমাজ তাদের জ্ঞান, মেধা, বিজ্ঞানচিন্তা, সাহিত্য-সংস্কৃতির রত্নভান্ডার নিয়ে প্রস্তুত হয়ে সুদৃঢ় চিত্তে এগিয়ে আসবে- এটিই কাম্য। এ প্রস্তুতিলগ্ন তো ক্ষণিকের নয়, সকল কালের- সকল প্রয়োজনের। আজ জ্ঞানচর্চা তাদের মুখ্য দায়িত্ব হলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ না করে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা তো কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।

আজ দেশে যখন বিরোধী দল নেই, দেশ যখন প্রতিবাদহীন, জাতির যখন ম্লান মূক মুখে নিস্তব্ধ, তখন ছাত্রসমাজকে অধ্যয়নের পাশাপাশি দায়িত্ব নিতে হবে এ জাতির ম্লান মূক মুখে ভাষা ফোটানোর, ভগ্ন-হৃদয়ে আশা জাগানোর।

            লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর