শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ধর্মপ্রচারের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম মাতৃভাষা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

ধর্মপ্রচারের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম মাতৃভাষা

ভাষা মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর দান, সেরা নিয়ামত ও তাঁর কুদরতের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। মহান প্রভু কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশম-লী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে অবশ্যই বহু নিদর্শন।’ সুরা রুম আয়াত ২১-২২। ইসলামের দৃষ্টিতে বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈষম্য ও ভৌগোলিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ সৃষ্টি করে না। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, নেই অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব।’ বুখারি।  কোনো মানুষ, জাতি ও দেশকে অকারণে অবমাননার বিধান ইসলাম সমর্থন করে না। কোনো ভাষাকে হেয় করার অনুমতি ইসলাম দেয় না। সব ভাষা ও সব মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। কোনো ভাষার অবমাননা তাঁর সৃষ্টির অবমূল্যায়ন ও তাঁর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের নামান্তর। ইসলাম ধর্মে মাতৃভাষার মূল্যায়ন অপরিসীম। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আমি প্রত্যেক রসুলকেই তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।’ সুরা ইবরাহিম আয়াত ৮। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তিন কারণে আরবি ভাষাকে ভালোবাস। কেননা আমি আরবি ভাষাভাষী, (আমার মাতৃভাষা আরবি) কোরআন আরবি এবং জান্নাতবাসীর ভাষাও হবে আরবি।’ মুসতাদরাক হাকেম। আমরা আরবি ভাষাকে ভালোবাসব। তা শিক্ষা করব, চর্চা করব। কেননা কোরআন-হাদিসের ভাষা আরবি। কোরআন-সুন্নাহ হলো শরিয়তের উৎস। ইসলামী শরিয়ত সঠিকভাবে আয়ত্ত করা এবং এর প্রচার-প্রসারের জন্য আরবি ভাষা জানার বিকল্প নেই। সঙ্গে সঙ্গে মাতৃভাষাকে সম্মান করা, তা বিশুদ্ধভাবে শিক্ষা ও চর্চা এবং সুন্দরভাবে উপস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন আমাদের একান্ত দায়িত্ব। কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান স্বজাতির কাছে পৌঁছানোর জন্য মাতৃভাষাই অন্যতম মাধ্যম। প্রত্যেক নবী-রসুলকে স্বজাতির কাছে দীন-ধর্ম যথাযথ ও সুস্পষ্টভাবে পৌঁছানোর জন্যই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) তাঁর মাতৃভাষায় ধর্ম প্রচার করেছেন। আমাদেরও ধর্ম প্রচার ও দাওয়াতি কার্যক্রম সূচারুরূপে আনজাম দেওয়ার জন্য স্বজাতীয় ভাষায় পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। মাতৃভাষায় স্পষ্টভাষী আলোচক আমাদের হতে হবে। হৃদয়গ্রাহী প্রাঞ্জল ভাষায় আপন জাতিকে আহ্বানের জন্য নবী-রসুলদের উত্তরসূরি হওয়ার আসন আমাদেরই গ্রহণ করতে হবে। মাতৃভাষা চর্চা ও এতে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে সর্বত্র দীন ধর্ম প্রচার-প্রসারের দ্বার উন্মুক্ত হবে। দাওয়াতি কার্যক্রম উত্তরোত্তর ত্বরান্বিত হবে। মহান প্রভু মহানবী (সা.)-কে তাঁর মাতৃভাষায় বিশুদ্ধতম বর্ণনাশক্তি এবং হৃদয়গ্রাহী উপস্থাপনায় সর্বোচ্চ যোগ্যতা প্রদান করেছিলেন। মহাগ্রন্থ আল কোরআন বিশুদ্ধতম সাহিত্যের উজ্জ্বল উদাহরণ। সাহিত্য যুগের বিখ্যাত সাহিত্যবিশারদ প-িতরা কোরআনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য চ্যালেঞ্জ একবাক্যে মেনে নিয়েছিলেন। তাই ভাষা ও সাহিত্য চর্চায় আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। বরং গোটা বিশ্বে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থে প্রয়োজনবোধে যে কোনো ভাষা বিশুদ্ধভাবে শিক্ষা করার প্রতি এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : কলামিস্ট, গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর