রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

হালাল উপার্জন অন্যতম ফরজ

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হক

রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অভাব কুফরের কারণ হয়।’ অভাব মানুষের স্বভাব বিনষ্টের কারণ হয়; ধর্মহীনতার দিকে ঠেলে দেয়। বর্তমান বিশ্বে এর নজির বিরল নয়। মুসলিম গরিব-মিসকিনদের এহেন দুর্বলতার সুবাদে ইহুদি-খ্রিস্টান এবং বিজাতিরা তাদের নীলনকশা কামিয়াব করতে সক্ষম হচ্ছে অনায়াসে। এ জন্য রসুল (সা.) হালাল উপার্জনকে নামাজতুল্য ফরজ ঘোষণা করেছেন। হালাল উপার্জন অন্যতম একটি ফরজ। তিনি বলেছেন, ‘আমানতদার ও সত্যবাদী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদের সাথী হবে।’

তবে যেমন অধিক অনটন মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয় তেমনি অর্থের আধিক্য, প্রাচুর্যও মানুষকে এমনকি গোটা জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি যখন কোনো জনপদকে ধ্বংসের ইচ্ছা পোষণ করি তখন অর্থশালীদের উদ্বুদ্ধ করি; আর তারা পাপাচারিতায় মেতে ওঠে। ফলে তাদের ওপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। তখন আমি তাদের ধ্বংস করি।’

আল্লাহর রসুল ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের অভাবের কারণে আমি ভীত নই, তবে অর্থ-প্রাচুর্যের কারণে তোমাদের প্রতি আমার ভয় হয়।’ এ কারণেই রসুলের স্বভাবে অর্থকড়ির ব্যাপারে মধ্যম অবস্থা বিরাজিত ছিল। সাহাবায়ে কিরামের স্বভাবেও এর প্রতিফলন ঘটে। তারা বস্তু বিশ্বাসী ছিলেন না; বরং আল্লাহর অনুগ্রহ কামনায় অভ্যস্ত ছিলেন।

কোরআনে আল্লাহর সন্তুষ্টির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে; কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা রসুলেরও গুণ, যা সর্বজনবিদিত। তিনি তাঁর জীবনের সব কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার রেজাকেই মৌলিক বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেন এবং উম্মতকেও আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ব্রতী হওয়ার নির্দেশ দেন। সাহাবিদের মধ্যেও তাঁর এ গুণের যথাযথ প্রতিফলন ঘটে। সাহাবিদের এ গুণের কথা আল কোরআনে এভাবে ব্যক্ত হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তাঁরাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।’

আয়াতে চেহারার নুরকে বিশেষ গুণ বলা হয়েছে। বস্তুত রসুল (সা.)-এর নুরানি চেহারা দেখে ইহুদিদের শ্রেষ্ঠ আলেম আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বলে উঠেছিলেন, ‘এ চেহারা মিথ্যা নয়।’ অবশেষে তিনি ইসলাম গ্রহণে ধন্য হন। অনেকে মনে করেন সিজদার কারণে কপালে যে কালো দাগ লেগে যায় আয়াতের উদ্দেশ্য তা-ই। আয়াতের উদ্দেশ্য আসলে এটা নয়; বরং সিজদার চিহ্ন দ্বারা আনুগত্য ও আবদিয়াতের এক বিশেষ আলো ও নুরকে বোঝানো হয়েছে।

হজরত হাসান বসরির (রহ.) মতে এ নুর কিয়ামতের ময়দানে প্রকাশ পাবে। কিন্তু দুনিয়ায়ও প্রকাশ পেতে বাধা নেই। ইবনে মাজার হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা রাতের আঁধারে অধিক নফল পড়ে, দিনের বেলায় তাদের মুখমন্ডলে নুর চমকে ওঠে।’ যার বাস্তবতা অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নদের সামনে অস্পষ্ট নয়। এ নুরের প্রতিফলন সাহাবিদের চেহারাসমূহেও প্রতিফলিত ছিল।

রসুল (সা.)-এর উপরোক্ত গুণাবলি সাহাবিদের মধ্যে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল আয়াতে সেদিকে আলোকপাত করে বলা হয়েছে, ‘এবং যারা তাঁর সাথী এবং সাহচর্য অবলম্বনকারী।’ এ সাহচর্য, সুহবত ও নৈকট্যই রসুলের সঙ্গে সাহাবিদের গভীর সম্পর্ক ও স্বভাবগত মিলের কারণ হয়। ফলে তারা নবীর অন্তরের চাহিদা অনুধাবনে সক্ষম হতেন।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর