শিরোনাম
সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

রজব মাসের মর্যাদা ও আমল

মুফতি মাও. মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

রজব মাসের মর্যাদা ও আমল

মহান আল্লাহর লক্ষ কোটি শুকরিয়া যিনি বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের এ মহামারীর সময়ে রজব মাসে আমাদের কবুল করেছেন। সম্মান, প্রজ্ঞার দাবি অনুযায়ী আল্লাহ কিছু মাস এবং দিবসকে অন্যান্য মাস ও দিবসের ওপর মর্যাদাপূর্ণ করেছেন। তেমনই একটি তাৎপর্যমন্ডিত মাস হলো পবিত্র মাহে রজব। যে মাস আমরা অতিবাহিত করছি। ‘রজব’ শব্দের অর্থ সম্মানিত। জাহেলিয়াতের যুগে আরবরা এ মাসকে অন্য মাসের তুলনায় অধিক সম্মান করত। এ জন্য তারা এ মাসের নাম রেখেছিল ‘রজব’। ইসলাম আগমনের পর বছরের ১২ মাসের মধ্য থেকে রজবসহ চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত মাস ঘোষণা করা হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে গণনায় মাস ১২টি, তন্মধ্যে চারটি (সম্মানিত হওয়ার কারণে) নিষিদ্ধ মাস, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)। নিষিদ্ধ ও সম্মানিত মাসগুলোর মধ্যে রজব একটি। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন যেভাবে সময় নির্ধারিত ছিল তা ফিরে এসেছে। ১২ মাসে এক বছর। এর মধ্যে চার মাস নিষিদ্ধ ও সম্মানিত। তিন মাস পরপর জিলকদ, জিলহজ ও মহররম এবং অপর মাস হলো মুজার গোত্র যাকে রজব মাস বলে জানে। যা জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ৪৩৮৫; মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ১৬৭৯)। ইমাম আবুবকর জাসসাস (রহ.) বলেন, ‘এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে, বাকি মাসগুলোয় ইবাদত করা সহজ হয়। আর এ মাসগুলোতে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্য মাসেও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। (আহকামুল কোরআন, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৬৩)। তাই আশহুরে হুরুমের অন্তর্গত রজব মাসের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে অধিক যত্নবান হতে হবে। রজব মাসের ফজিলত সম্পর্কে একটি সুপ্রসিদ্ধ হাদিস, জলিলুল কদর সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রসুল (সা.) এই দোয়া পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবাও ওয়া শা’বান ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরি রমাদান।’ অর্থ- ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস নং ৬৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ২৩৪৬)। এ থেকেই অনুধাবন করা যায়, মুমিন জীবনে মাহে রজবের গুরুত্ব কত অপরিসীম। রজব মাস এত ফজিলতপূর্ণ হওয়ার কারণ এ মাসে উল্লেখযোগ্য একাধিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এ মাসের ২৬ তারিখ রাতে আল্লাহতায়ালা রসুল (সা.)-কে মিরাজের মাধ্যমে তার দিদার দিয়েছেন। তাই এ মাস এত মর্যাদাপূর্ণ। তাছাড়া পবিত্র হাদিসের কিতাবগুলোতে ও রজব মাসে রসুল (সা.)-এর অধিক নফল ইবাদতের বর্ণনা পাওয়া যায়। এ থেকেও রজব মাসের বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়। গুনাহের গন্ধে কলুষিত অন্তর আত্মাকে পবিত্র তাওবার মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে এ রজব মাসেই। হজরত আবু বকর বলখি (রহ.) বলেন, ‘রজব ফসল রোপণের মাস, শাবান ফসলে পানি সেচ দেওয়ার মাস আর রমজান হলো ফসল তোলার মাস।’ তিনি আরও বলেন, ‘রজব মাস ঠান্ডা বাতাসের মতো, শাবান মাস মেঘমালার মতো। আর রমজান মাস হলো বৃষ্টির মতো’- (লাতায়েফুল মা’আরেফ-১৪৩)। 

লেখক : খতিব, মনিপুর বাইতুল আশরাফ জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর