শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা আমাদের ইমানি দায়িত্ব

মাহমুদুল হক জালীস

মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা আমাদের ইমানি দায়িত্ব

প্রতিটি মানুষকে আল্লাহ অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। ভাষা তার অন্যতম। এর দ্বারা সব মানুষ নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করতে পারে। একে অন্যের কথা বুঝতে পারে। অনুধাবন করতে পারে প্রয়োজন। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির ভাষা ভিন্নরকমের। এমনকি একই ভাষাভাষী মানুষের কণ্ঠস্বর ও উচ্চারণভঙ্গি পৃথক। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। তাঁর সৃষ্টির বৈচিত্র্যের প্রমাণ। তা ছাড়া মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যমও ভাষা। তাই তো ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে পৃথক ভাষা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতার মধ্যে রয়েছে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন।’ সুরা রুম আয়াত ২২। এ জন্য ইসলামের দৃষ্টিতে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বয়ং আল্লাহ আমাদের মাতৃভাষার গুরুত্ব দিয়ে হজরত আদম (আ.) থেকে শেষ নবী (সা.) পর্যন্ত সবকটি আসমানি কিতাব নবীদের মাতৃভাষায় অবতীর্ণ করেছেন। যাতে প্রত্যেক নবী-রসুল তাঁদের নিজস্ব ভাষায় আল্লাহর আহ্বান মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। ধর্মের দাওয়াত সহজ ও সাবলীলভাবে সবার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারেন। এ প্রসঙ্গ কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আমি সব পয়গম্বরকেই (নবী-রসুলকে) তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি যাতে তাদের পরিষ্কার বোঝাতে পারে। এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনিই পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।’ সুরা ইবরাহিম আয়াত ৪। এ জন্য হজরত দাউদ (আ.)-এর মাতৃভাষা ইউনানি বা আরামাইক ভাষায় জাবুর কিতাব অবতীর্ণ হয়। হজরত মুসা (আ.)-এর মাতৃভাষা ইবরানি বা হিব্রু ভাষায় তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ হয়। হজরত ইসা (আ.)-এর মাতৃভাষা সুরিয়ানি বা সিরিয়ার ভাষায় ইনজিল অবতীর্ণ হয় এবং হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাতৃভাষা আরবিতে কোরআন অবতীর্ণ হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আমি কোরআনকে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।’ সুরা ইউসুফ আয়াত ২। অন্য আয়াতে আল্লাহ আরও ইরশাদ করেছেন, ‘তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা।’ সুরা আর রহমান আয়াত ২-৪।

ভাষায় পরিপূর্ণভাবে বোঝানো সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর যদি আমি কোরআনকে অনারব ভাষায় অবতীর্ণ করতাম তবে তারা অবশ্যই বলত এর আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বিবৃত হলো না কেন।’ সুরা হামিম সাজদা আয়াত ৪৪। তারা বলত এ কেমন কথা, অনারবি কিতাব আর আরবি ভাষাভাষী রসুল! ইসলাম শুধু মাতৃভাষা নয়, মাতৃভাষার আঞ্চলিক উপভাষাও সমর্থন করেছে। খেয়াল রাখা হয়েছে আরবের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর প্রতিও। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, ‘কোরআনকে সাতটি উপভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ বুখারি। ভাষার মর্যাদা রক্ষা যেমন প্রতিটি মানুষের ইমানি দাবি, তেমনি ভাষার জন্য যাদের অবদান রয়েছে সেসব ভাষাশহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করাও ইমানের দাবি। মহান আল্লাহ সব ভাষাশহীদকে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।

লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর