রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
বিচিত্রতা

পোশাকের কদর

দুনিয়ায় কৃতী পুরুষের সংখ্যা কম হলেও চেহারাসর্বস্ব মাকালের সংখ্যা কম নয়। পোশাকি চেহারা বা কৃত্রিম আভিজাত্যের প্রতি মোহগ্রস্তদের জন্য শেখ সাদির সেই গল্পটি স্মরণীয়। ‘শেখ সাদি একবার রাজদরবারে যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে পথে সন্ধ্যা নামল। বাধ্য হয়ে তিনি আশ্রয় নিলেন এক আমিরের বাড়িতে। তাঁর পরনে ছিল অতি সাধারণ পোশাক। আমিরের লোকজন তাঁকে তেমন পাত্তাই দিল না। কোনো আদর-যত্নও মিলল না সেখানে। রাতটা কোনোরকমে কাটিয়ে ভোরেই শেখ সাদি যাত্রা করলেন। মনে তাঁর একরাশ ক্ষোভ। কদিন পর রাজদরবার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একই আমিরের প্রাসাদে পুনরায় আশ্রয় নেন। তাঁর পরনে ছিল রাজার দেওয়া মূল্যবান পোশাক। সম্মানিত অতিথিকে দেখে আমির হাঁকডাক শুরু করেন। নিজের পাশে বসিয়ে খানাপিনার ব্যবস্থা হয়। ভৃত্যরা নিয়ে আসে পোলাও-কোরমা-কাবাব আরও কত কী। শেখ সাদি খেতে বসেন। কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার। তিনি খাবার মুখে না দিয়ে জামার পকেটে ভরতে লাগলেন। মেহমানের আচরণে আমিরের চোখ তো ছানাবড়া। তিনি বিনীতভাবে এ আচরণের কারণ জানতে চাইলেন। জবাবে সাদি বললেন, জনাব! এ খাবার তো আমার পোশাকেরই প্রাপ্য।

আমির পূর্বাপর শুনে লজ্জিত হন। বারবার ক্ষমা চান শেখ সাদির কাছে। পোশাকি আচরণের মধ্যে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয় মনুষ্যত্বের উৎকর্ষে। মনুষ্য সত্তা ও পশু সত্তা সম্পূর্ণ আলাদা। পশু তা সে বাঘ, শিয়াল বা সিংহ হোক জন্মের পরই বাঘ, শিয়াল, সিংহ হিসেবে বিবেচিত হয়। একজন মানবসন্তানকে মানুষ হয়ে ওঠার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে হয়। মানুষের মতো মানুষ হতে হলে প্রতিদিন নিজেকে অতিক্রম করতে হয়। মনুষ্যত্বের শিক্ষায় নিজেকে দীক্ষিত করতে হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর