মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পবিত্র বিয়েতে ঘৃণ্য যৌতুক প্রথার নিরসন হোক

মুফতি রুহুল আমিন কাসেমী

পবিত্র বিয়েতে ঘৃণ্য যৌতুক প্রথার নিরসন হোক

বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনকে কলঙ্কিত করেছে যৌতুক প্রথা। যৌতুক প্রথা সমাজে এখন এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে যৌতুক ছাড়া বিয়ের কল্পনা করাও বৃথা। সমাজ একে গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মেয়ের জন্মলগ্ন থেকেই কন্যাদায়গ্রস্ত গরিব মা-বাবাকে যৌতুকের করাল গ্রাসের নির্মম পরিণতির কথা ভেবে মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। একটা সময় এ প্রথা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন সব জায়গায় ছড়িয়েছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবার মধ্যেই ছড়িয়েছে। এমনকি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিটি মানুষের ভিতরে লোভাতুর দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে আসছে। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়তই যৌতুকের দাবিতে নারী নির্যাতন, নারী হত্যা, আত্মহত্যা ও তালাকের মতো সংবাদ ছাপা হয়। এর অন্যতম কারণ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ‘যৌতুক প্রথা’। নারী নির্যাতনকারী যৌতুকলোভী স্বামীর আইনি বিচারে জেল-জরিমানা কিংবা ফাঁসি হয়। এ রায় নারী নির্যাতন দমন ক্ষেত্রে খুব একটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এটা সাংস্কৃতিক ও মানসিক ব্যাপার। ফলে চিন্তা-চেতনা ও মননের পরিবর্তন না হলে এ প্রথা বিলুপ্ত হবে না। সুতরাং যৌতুক প্রথা বন্ধ করতে হলে সমাজকে সচেতন হতে হবে এবং দরকার সরকারি ও নাগরিক উদ্যোগ। আইনে বলা আছে, যৌতুক যে দেবে, যে গ্রহণ করবে দুজনই সমান অপরাধী। যৌতুককে না বলুন। যৌতুক চাওয়া মানে ভিক্ষা চাওয়া। যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি। যৌতুক দেওয়া -নেওয়া ঘৃণিত কাজ। সর্বোপরি মুসলিম হিসেবে যৌতুক নেওয়া হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা হারাম সম্পদ ভোগ কোর না।’ কুকুর এবং শূকরের মাংস খাওয়া যেমন হারাম, তেমনি যৌতুক নেওয়াও মুসলমানের জন্য হারাম। এতে একদিকে যে রকম নারীকে অসম্মান করা হয়, অন্যদিকে তার পরিবারের ওপর বর্ণনাতীত মারাত্মক জুলুম করা হয়। বরং ইসলাম একজন নারীকে তার সম্মান দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করে, তার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করে, তার উপযুক্ত সম্মানজনক দেনমোহর দিয়ে তাকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই বিয়ের আগে ও পরে কন্যা ও কন্যার পরিবারকে মানসিক, অর্থনৈতিক কোনো ধরনের প্রেসার দেওয়া, চাপ প্রয়োগ করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি কন্যাপক্ষকে বিয়ে উপলক্ষে কোনো ধরনের খরচপাতি করারও বাধ্যবাধকতা নেই। বরং সম্পূর্ণ খরচ বরপক্ষকেই বহন করতে হবে। অথচ আমাদের মুসলমান সমাজে সম্পূর্ণরূপে এর উল্টো চিত্র পরিলক্ষিত হয়। বিয়ের আগে কন্যা পছন্দ করার আগেই যৌতুকের লেনদেন নিয়ে পাকাপোক্ত আলোচনা হয়ে যায়। এমনকি সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও যৌতুকের সামান্য হেরফের হওয়ার কারণে বিয়ের আসর থেকে বরপক্ষ উঠে চলে যায়। ফলে কন্যাপক্ষের পরিবারে হাহাকার, মাতম শুরু হয়ে যায়। ইসলাম শুধু যৌতুক প্রথার বিরোধীই নয়, বরং বিয়ের ক্ষেত্রে সব ধরনের অপচয়ের বিপক্ষেও। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সেই বিয়েই সর্বাধিক বরকতময় যে বিয়েতে খুব সামান্যই খরচ হয়।’ রসুল (সা.) নিজে বিয়ে করেছেন সাধারণভাবে, নিজের প্রিয় কন্যা হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বিয়ে দিয়েছেন একইভাবে। বিয়েতে অপব্যয় পাত্র-পাত্রীর পরিবারের জন্য কষ্টকর পরিণতি ডেকে আনে। সামাজিক সম্মান রক্ষার অজুহাতে অনেকে ঋণ করে মাত্রাতিরিক্ত খরচ করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। কন্যাদায়গ্রস্ত গরিব পিতা ঋণগ্রস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপনে নিপতিত হয়। যৌতুককে শোষণ ও নারী নিগ্রহের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক ইমাম ও খতিব : কাওলারবাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান ঢাকা।

সর্বশেষ খবর