শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন ইমানি শক্তিতে বলীয়ান

আল্লামা মাহ্‌মূদুল হাসান

হক প্রতিষ্ঠায় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্ম ও অবদান সর্বজনস্বীকৃত। তাঁর তিরোধানের পর সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন, ফুকাহা ও মুহাদ্দিসিন এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। হজরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ (রহ.)-এর চিন্তাধারা এবং সংস্কারমূলক অভিযান মূলত ওই অব্যাহত ধারাবাহিকতারই অন্তর্ভুক্ত।  সাহাবায়ে কিরামের জীবনাদর্শের প্রধান আকর্ষণ ছিল তাদের ইমান ও ইমানি শক্তি। রসুলের সুহবত ও সান্নিধ্যের মাধ্যমে তারা এই ইমানি শক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইমানবিহীন কোনো আমল গৃহীত হয় না। আবার শক্তিশালী ইমানের অধিকারী না হলে দুর্বল ইমান না দুনিয়ার নিরাপত্তাবিধান করতে পারে না পরকালে নাজাতের পথ সুগম করতে পারে! এ সম্পর্কে মালিক ইবনে দিনার (রহ.)-এর ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক। তাঁর প্রথম জীবন তেমন উন্নত ছিল না; বরং পাপাচারিতা ও অপরাধপ্রবণতার মধ্যেই তাঁর সময় কাটত। কিন্তু একটি স্বপ্ন তাঁর জন্য সৌভাগ্যের দ্বার খুলে দেয়। তিনি স্বপ্নে দেখেন একটি বিরাট বিষাক্ত সাপ ফণা তুলে তাঁকে দংশন করতে উদ্যত! আত্মরক্ষার তাগিদে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দৌড়াতে থাকেন। কিন্তু আশ্চর্য যে সাপটিও তাঁর পেছনে পেছনে তাঁকে আক্রমণের উদ্দেশে দৌড়াচ্ছে। তিনি ভাবলেন এ সাপের হাত থেকে আমার রক্ষার কোনো উপায় নেই। এমন সময় সামনে একজন অতিবৃদ্ধ দুর্বল লোক দেখে তার আশ্রয় কামনা করেন। বৃদ্ধ লোকটি বললেন, হে আগন্তুক! এ সাপের হাত থেকে তোমাকে মুক্ত করার ক্ষমতা কারও নেই; এমনকি আমারও নেই। তবে তুমি ওই ঝুপড়িটিতে আশ্রয় নিতে পারলে রক্ষা পেয়ে যাবে। মালিক ইবনে দিনার দ্রুত দৌড়ে সেই ঝুপড়িতে আশ্রয় নিলেন। ইতিমধ্যে তিনি দেখলেন সাপটি আর তার পেছনে দৌড়াচ্ছে না; বরং ফিরে যাচ্ছে। এ ঝুপড়িতে ছিল মালিক ইবনে দিনারের নাবালিকা কন্যা; জন্মের পর অল্প বয়সেই যার মৃত্যু হয়েছিল। কন্যাটি তাঁকে দেখা মাত্র চিৎকার করে এসে কোলে উঠে পড়ে এবং আব্বা! আব্বা! বলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রীতি প্রদর্শন করে। হাদিসের মর্মানুসারে এ মৃত কন্যা সাপের দংশন থেকে পিতার জন্য মুক্তির কারণ হয়েছে। পিতা প্রশান্ত মনে স্নেহের সুরে কন্যাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আমার মা! এ সাপটি আমাকে দৌড়াচ্ছিল কেন তুমি জান?’ কন্যা উত্তর করল, হ্যাঁ, আব্বাজান! আপনার পাপাচারিতা এবং গুনাহের পরিণামে এ সাপটি তৈরি হয়েছে। আমি না হলে সে অবশ্যই আপনাকে দংশন করত। পিতা প্রশ্ন করলেন, হে আমার স্নেহের আম্মা! ওই বৃদ্ধ লোকটি কে বলতে পার, যে আমাকে তোমার ঝুপড়িতে আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছে? কন্যা বলল, হ্যাঁ আব্বাজান, ওই বৃদ্ধ হচ্ছেন আপনার ইমান, যার কোনো শক্তি নেই। আপনার বদ আমলের কারণে আপনার ইমান রোগাক্রান্ত এবং এমন দুর্বল হয়ে পড়েছে যে সে আপনাকে পাপাচারিতার স্বরূপ সাপের হাত থেকে রক্ষা করতে অক্ষম। এরপর কন্যা স্বীয় পিতাকে উদ্দেশ করে বলল, হে আমার পিতা! এখনো কি তোমার সময় হয়নি? তুমি আজও পাপাচারিতায় লিপ্ত আছে; অথচ তোমার মৃত্যু অতি নিকটে! তোমার দুর্বল ইমান যে তোমাকে দোজখের কঠোর আজাব থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে না তাকি তুমি কখনো ভেবে দেখেছ? হে আমার পিতা! অতি সত্বর পাপাচারিতা বর্জন করে নেক আমলের দ্বারা স্বীয় ইমানকে বলীয়ান কর। অন্যথায় সাপের দংশন ও কঠোর আজাব থেকে রক্ষার কোনো উপায় হবে না। এ স্বপ্ন থেকে জাগরণের পর মালিক ইবনে দিনার (রহ.) খাঁটি তওবা করে ইবাদত-রিয়াজতের মাধ্যমে পরবর্তী যুগে মহান ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হন। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ হয় যে দুর্বল ইমানের দ্বারা কাক্সিক্ষত মুক্তি লাভ হয় না, হতে পারে না। এ জন্যই প্রয়োজন নেক আমলের।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর