শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস

সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী

জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস পালিত হচ্ছে আজ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফলে ১৯৭৪ সালের ২৬ আগস্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা তৎকালীন চারটি পরিসংখ্যান সংস্থাকে একীভূত করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতিষ্ঠা করা হয়। সময়োপযোগী এবং মানসম্মত পরিসংখ্যান প্রস্তুত করে দেশের পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে বিবিএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস অফিশিয়াল পরিসংখ্যান প্রণয়ন ও প্রকাশ করে থাকে। জনশুমারি, কৃষিশুমারি, অর্থনৈতিক শুমারিসহ বিভিন্ন প্রকার সার্ভে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করে বিবিএস। জাতীয় ও স্থানীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে নিয়োজিত পরিকল্পনাবিদ, নীতিনির্ধারক, সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও এবং জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সংকলন, বিশ্লেষণ ও প্রকাশের দায়িত্ব বিবিএস নিয়মিতভাবে পালন করে আসছে।

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও পরিকল্পনা প্রণয়নে পরিসংখ্যানের অপরিহার্যতা উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর ঢাকার আগারগাঁওয়ে ২ একর ১৪ শতক জমির ওপর নির্মাণ শেষে একটি সুদৃশ্য ও দৃষ্টিনন্দন পরিসংখ্যান ভবন উদ্বোধন করেন। এরপর ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়ণের অন্যতম শক্তি ‘পরিসংখ্যান ও তথ্যপ্রযুক্তি’ বিবেচনায় ২০১২ সালে পরিসংখ্যানব্যবস্থাকে আরও সুসংহত ও গণমুখী করার লক্ষ্যে তিনি বিস্তৃত পরিসরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন ‘পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। পরিসংখ্যানব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান তথা এর আইনগত ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩’ মহান জাতীয় সংসদে পাস করা হয়। দেশের পরিসংখ্যানব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান উন্নয়নে জাতীয় কৌশলপত্র (NSDS) অনুমোদন করেন। এটি পরিসংখ্যানব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রণীত একটি বিস্তারিত, বাস্তবসম্মত, অংশগ্রহণমূলক, পরিবর্তনশীল ও রাষ্ট্রীয় স্বত্বাধীন পরিকল্পনা দলিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বহির্বিশ্বের সঙ্গে মানসম্মত তথ্যের আদান-প্রদান নিশ্চিত করে উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে জাতিসংঘ-ঘোষিত ‘বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। ৮ জুন, ২০২০ দুপুর ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে যথারীতি অনুমতি নিয়ে প্রতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস পালনের প্রস্তাব উপস্থাপন করি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় প্রতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস’ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রীকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রসঙ্গত, ৪ মার্চ, ২০১৮ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিসংখ্যান সরবরাহের ক্ষেত্রে বিবিএসসহ সব উপাত্ত সরবরাহকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের সুবিধার্থে প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ অনুমোদনক্রমে সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় উপাত্ত সমন্বয় কমিটি (National Data Coordination Committee-NDCC) গঠন করা হয়। ৫ এপ্রিল, ২০১৮ এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এসডিজিসহ অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তির লক্ষ্যে তথ্য সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গে হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত সমন্বয় সাধনের জন্য এনডিসিসি কাজ করে যাচ্ছে।

পরিসংখ্যানসংক্রান্ত কার্যাবলি সমন্বয় এবং সুসংহত করতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/ বিভাগে বিদ্যমান ‘পরিকল্পনা উইং/অধিশাখাকে ‘পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান উইং’/অধিশাখা হিসেবে নামকরণপূর্বক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে বিসিএস পরিসংখ্যান ক্যাডারের ৫৮টি পদ সৃজনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২৯ অক্টোবর, ২০১৮-তে সারসংক্ষেপে সানুগ্রহ অনুমোদন প্রদান করেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে একজন করে উপপরিচালক/পরিসংখ্যান কর্মকর্তা পদায়ন করা হলে মন্ত্রণালয়/বিভাগের পরিসংখ্যানসংক্রান্ত কার্যাবলির সুষ্ঠু সমন্বয় সহজ হবে ও পারস্পরিক যোগাযোগ এবং পরিসংখ্যানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে পত্র যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নির্ভুল ও সময়োচিত পরিসংখ্যান প্রণয়নে বিবিএস-সংশ্লিষ্ট সবার আস্থা, প্রশংসা অর্জনসহ দেশের অফিশিয়াল পরিসংখ্যান প্রস্তুতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নিয়োগ, পদোন্নতিসহ সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯’ চূড়ান্তভাবে অনুমোদনক্রমে ১৮ মে, ২০১৯-এ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাঠপর্যায়ের সব কার্যক্রম গতিশীল ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ২০১৮ সালে বিবিএসের মাঠপর্যায়ের জেলা ও বিভাগীয় অফিসসমূহে গাড়ি সরবরাহ করা হয়। ২০২০ সালে মাঠপর্যায়ের উপজেলা ও থানা পরিসংখ্যান অফিসসমূহে মোটরসাইকেল ও নারী কর্মকর্তাদের জন্য স্কুটি সরবরাহ করা হয়। এটা বিবিএসের জন্য কম গৌরবের নয়। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি), রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫), ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রভৃতির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে বিবিএসের বস্তুনিষ্ঠ ও সময়োচিত পরিসংখ্যান সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে এ প্রতিষ্ঠান।

লেখক : সাবেক সিনিয়র সচিব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর