আল্লাহ মানুষসহ প্রতিটি জীবের সৃষ্টিকর্তা। মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট সব জীবের সেরা। মানবসেবা বা অন্য মানুষের কল্যাণে ব্রতী হওয়া বড় ধরনের ইবাদত। বিপদাপন্ন বা অভাবী মানুষকে সহায়তার মাধ্যমে শুধু মানবপ্রেম নয় আল্লাহ-প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। মানুষের বিপদাপদে অন্য মানুষ তার পাশে না দাঁড়ালে তা আল্লাহকে রুষ্ট করা হয়। পক্ষান্তরে আর্তমানবতার সেবায় অবদান রাখলে আল্লাহকে পাওয়া যায়।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিনে বলবেন হে আদমসন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার সেবা-শুশ্রুষা করনি। সে বলবে হে পরোয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার সেবা-শুশ্রুষা করব অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন তুমি কি জানতে না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল আর তুমি তার সেবা করনি, তুমি কি জানতে না তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে আমাকে তার কাছেই পেতে।...’ মুসলিম।
ইসলাম মানবতার জীবনবিধান। এ জীবনবিধান মানুষকে অন্য মানুষের প্রতি সহনভূতিশীল হতে শিক্ষা দেয়। ইসলামের মানবিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে। মানুষের কষ্টে কষ্ট বোধ করে। অন্য মানুষের বিপদে এগিয়ে আসে। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের কারণে মোমিনরা মানবতার জন্য আত্মনিবেদিত হওয়াকে নিজের কর্তব্য বলে ভাবে। কোনো মোমিন তার প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত রেখে নিজে পেটপুরে খেতে পারে না। মহান আল্লাহ মোমিনদের মানবিক মনোভাবের প্রশংসা করে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘তারা তাদের খাবারের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও সে খাবার অসহায়, এতিম ও বন্দীদের খাওয়ায়।’ সুরা দাহার, আয়াত ৮।ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস (রা.) ইবনে যুবাইর (রা.)-কে অবহিত করে বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে তৃপ্তিসহকারে আহার করে সে মোমিন নয়। আদাবুল মুফরাদ।
আরেক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার বিপদসমূহের মধ্যকার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে এর প্রতিদানে আল্লাহ কিয়ামতের দিনের বিপদসমূহের কোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় স্থানে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবে আল্লাহও তার দোষ-ত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্য করেন।’ আবু দাউদ।
আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ইমান পোষণকারীরা পরস্পরের প্রতি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। ইসলামী সমাজকে তুলনা করা হয় অখন্ড মানবদেহের সঙ্গে। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘মোমিন মোমিনের জন্য ইমারতসদৃশ, যার একাংশ অন্য অংশকে মজবুত করে।’ এরপর তিনি (হাতের) আঙুলগুলো (অন্য হাতের) আঙুলে (এর ফাঁকে) ঢোকালেন। বুখারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মানবতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার তৌফিক দিন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।