বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দান-খয়রাতে বান্দার সম্পদ হ্রাস পায় না

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতদের একে অন্যের প্রতি দয়ালু হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ যাদের সম্পদ দিয়েছেন তারা যাতে আল্লাহর দেওয়া সম্পদ শুধু নিজে ভোগ না করে সমাজের অভাবী ও দুঃখী মানুষের কষ্ট লাঘবেও ব্যয় করে সে ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। তিরমিজির হাদিসে হজরত আবু কাবশা আনমারি (রা.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি বলেছেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন তিনটি বিষয়ের ওপর তিনি কসম খেতে পারেন। প্রথমত. দান-খয়রাত দ্বারা কোনো বান্দার সম্পদ হ্রাস পায় না। (অর্থাৎ আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করার কারণে কেউ কোনো দিন গরিব ও নিঃস্ব হয়ে যায় না, বরং তার সম্পদে আরও বরকত হয় এবং যার পথে সে দান-খয়রাত করে সেই মহান সত্তা তাঁর অসীম ভান্ডার থেকে তাকে আরও বেশি দিয়ে থাকেন)। দ্বিতীয়ত. কোনো বান্দা অত্যাচারিত হয়ে যদি এর ওপর সবর করে তাহলে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। (অর্থাৎ আল্লাহ এ বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে যখন কোনো বান্দার ওপর অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতন করা হয় আর সে সবর করে যায় তখন আল্লাহ এর বিনিময়ে দুনিয়ায়ও তার সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দেন)। তৃতীয়ত. কোনো বান্দা যখন ভিক্ষাবৃত্তির দ্বার উন্মুক্ত করে তখন আল্লাহ তার ওপর অভাবের দরজা খুলে দেন। (অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষের সামনে ভিক্ষার হাত প্রসারিত করার পেশা অবলম্বন করবে আল্লাহর ফয়সালা অনুযায়ী দারিদ্র্য ও অভাব তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।) এ তিনটি বিষয়ে আল্লাহর এমন অনড় সিদ্ধান্ত যে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি এগুলোর ওপর কসম করতে পারি। ইসলামে অন্য মানুষের উপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এটা ইমানের দাবি এবং আল্লাহর অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ। উপকার করা যায় আর্থিকভাবে এবং বুদ্ধি ও বিদ্যা দিয়ে। যে আল্লাহ-প্রদত্ত যোগ্যতা মানবসেবায় নিয়োজিত করে এর ফলে তার যোগ্যতা সার্থক হয়। সে দুনিয়া ও আখিরাত সাফল্যমন্ডিত হয়। নানাভাবে মানুষের উপকার করা যায় এবং যেভাবেই তা করা হোক না কেন আল্লাহর কাছে তা মর্যাদাপূর্ণ। তবে সব ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দান করতে হবে। অর্থাৎ উপকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে বদলা পাওয়া কিংবা সুনাম-সুখ্যাতি লাভ করা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন বা অন্য কোনো সুবিধা ভোগ করা অথবা দান করে খোঁটা দিয়ে দমিয়ে রাখার জন্য নয়। আল্লাহ বলেন, আমরা তো তোমাদের খাওয়াই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আমরা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না। সুরা দাহার, আয়াত ৯। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনো মোমিনের দুনিয়াবি সংকটসমূহের একটি বিমোচন করে দয়াময় আল্লাহ তাঁর আখিরাতের সংকটসমূূূহ মোচন করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন করবে আল্লাহ আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকেন। মুসলিম।

উপরোক্ত হাদিসের আলোকে আল্লাহ আমাদের সবাইকে অন্য মানুষের অভাব মোচনে অবদান রাখার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর