বুধবার, ৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি

কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙুক

চিকিৎসা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের স্বাধিকার ও মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশবাসীর স্বাস্থ্য পরিচর্যা তথা চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতায় বাংলাদেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন সরকার গঠিত হয় তখন চারদিকে নাই নাই আর নাই। সে অবস্থায়ও বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গত চার যুগের বেশি সময়ে যে সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে তারা স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সাধ্যমতো অর্থ জোগানের চেষ্টা করেছে। কিন্তু এ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের কত ভাগ দেশবাসীর কল্যাণে ব্যয় হয়েছে আর কত ভাগ আরব্য উপন্যাসের থিফ অব বাগদাদ গয়রহের পেটে ঢুকেছে তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। বলা হয়, চিহ্নিত সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়েছে এ খাতটি। স্বাস্থ্য মাফিয়া নামে পরিচিত এক ব্যক্তির হাতে এ খাতটি এতটাই জিম্মি যে পুকুর চুরি তাদের বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৮ সালে রংপুর আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটায় শুধু দুটি কার্যাদেশেই তারা লোপাট করেছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। হাসপাতালের লন্ড্রি প্লান্ট স্থাপন, ১৮টি এয়ারকন্ডিশনার কেনা, দুটি আইসিইউ বেড স্থাপন এবং একটি ব্লাডব্যাংক রেফ্রিজারেটর কেনার জন্য কথিত স্বাস্থ্য মাফিয়ার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দুটি দেওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালের পর স্বাস্থ্য খাতের জঘন্য ওই সিন্ডিকেটের উত্থান। এরপর দুবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বদল হলেও লুটেরা সিন্ডিকেটটির দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি। রংপুর আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যাদেশ এবং বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার ‘ব্লাডব্যাংক রেফ্রিজারেটর’ কেনা হয়েছে ৩০ লাখ টাকায়। আইসিইউ বেডের জন্য ৭০ হাজার টাকার পালস অক্সিমিটার কেনা হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ টাকায়। আইসিইউর জন্য চারটি কার্ডিয়াক মনিটর কেনা হয়েছে ৫৮ লাখ ৪ হাজার টাকায়, যার সর্বোচ্চ বাজারমূল্য ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। বলা হয়, অশুভ এ সিন্ডিকেটটি স্বাস্থ্য খাতের নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এ খাতকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষ কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে উঠবেন এমনটিই প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর