রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

গিরীশচন্দ্র সেন

গিরীশচন্দ্র সেন

গিরীশচন্দ্র সেন (১৮৩৫-১৯১০) ধর্মবেত্তা ও অনুবাদক। বাংলা ভাষায় কোরআন শরিফের সার্থক ও পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ তিনিই প্রথম করেন। নারায়ণগঞ্জের পাঁচদোনা গ্রামে তাঁর জন্ম। পেশাগত জীবনের প্রথম পর্যায়ে তিনি ময়মনসিংহের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাচারিতে নকলনবিশ ছিলেন। ছাত্রজীবনে ফারসি ও সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করেন। কেশবচন্দ্র সেন ও বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর প্রভাবে ১৮৭১ সালে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন এবং প্রচারব্রত গ্রহণ করে উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত ও ব্রহ্মদেশ  (মিয়ানমার) ভ্রমণ করেন। গুরু কেশবচন্দ্র সেনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় তিনি ইসলামী সাহিত্য-সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। এ উপলক্ষে আরবি ভাষা ও ইসলামী ধর্মশাস্ত্র চর্চার জন্য ১৮৭৬ সালে লখনৌ গমন করেন। সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে কোরআনের বঙ্গানুবাদ (১৮৮১-৮৬) সম্পন্ন করেন। বাংলা সাহিত্যে এটা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ, চারিত্রিক উদারতা এবং সত্যবাদিতার জন্য গিরীশচন্দ্র ব্রাহ্ম-হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টান সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেন। এক কথায় তিনি ছিলেন সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রতীক। তাই সবার কাছে তিনি ‘ভাই গিরীশচন্দ্র’ নামে পরিচিত ছিলেন। গিরীশচন্দ্রের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তাপসমালা’ (১৮৮০-৯৫) ৯৬ জন ওলি-আউলিয়ার জীবনচরিত, যা শেখ ফরিদুদ্দিন আত্তারের ফারসি ভাষায় রচিত তাজকিরাতুল আওলিয়ার ভাবাদর্শে রচিত। তিনি ‘হাদিস-পূর্ব বিভাগ’ (১৮৯২) শিরোনামে মিশকাতের প্রায় অর্ধাংশের অনুবাদ প্রকাশ করেন। গিরীশচন্দ্রের উল্লেখযোগ্য আরেকটি গ্রন্থ হলো ‘তত্ত্বরত্নমালা’ (১৯০৭)। এটি শেখ ফরিদুদ্দিন আত্তারের মানতেকুত্তায়েব ও মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির মসনবি নামক প্রখ্যাত ফারসি গ্রন্থদ্বয় থেকে সংকলিত। এতে নীতিকথা ও শিক্ষণীয় বিষয় ছোট ছোট গল্পের আকারে রসাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি মূল ফারসি গ্রন্থ থেকে গুলিস্তাঁ ও বুস্তাঁর হিতোপাখ্যানমালা, হাদিস বা মেসকাত মসাবিহ (১৮৯২-৯৮), দীউয়ান-ই-হাফিজ প্রভৃতি গ্রন্থ, মহাপুরুষ চরিত (১৮৮২-১৮৮৭), মহাপুরুষ মোহাম্মদ ও তৎপ্রবর্তিত ইসলাম ধর্ম, এমাম হাসান ও হোসায়নের জীবনী (১৯১১), চারজন ধর্মনেতা, চারটি সাধ্বি মুসলমান নারী, খলিফাবর্গ- সব মিলিয়ে ৪২টি পুস্তক বাংলা ভাষায় রচনা ও প্রকাশ করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর