বাঙালির জাতীয় জীবনের অনন্য এক দিন ৭ মার্চ। ৫০ বছর আগে এই দিনে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান তথা আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রচিত হয়েছিল অনন্য এক কবিতা। সর্বকালের সেরা বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইতিহাসের বৃহত্তম জনসমাবেশে ঘোষণা করেছিলেন তাঁর সেই অমর পঙ্ক্তি ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ লাখ লাখ মানুষের জনসমুদ্রে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু দৃঢ় প্রত্যয়ে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিনি যদি নির্দেশ দিতে নাও পারেন, তবে আক্রান্ত হলে বাঙালিরা যেন যার কাছে যা আছে তা নিয়ে শত্রুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে ভাষণ দেন জাতিসংঘের স্বীকৃতি অনুযায়ী তা দুনিয়ার সেরা ভাষণগুলোর একটি। চলতি বছর থেকে ৭ মার্চ প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উড্ডীন করা হচ্ছে। জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ৭ মার্চ দিনটি মাইলফলকের ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে ভারতবর্ষ ভেঙে প্রতিষ্ঠিত হয় দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় বাঙালি মুসলমানদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ১২০০ মাইলের ব্যবধানে দুটি ভূখন্ড নিয়ে গঠিত পাকিস্তানে বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু পাকিস্তানি শাসনামলে সর্বক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত ও শোষিত করার ঘৃণ্য ইতিহাস রচিত হয়। এর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব রুখে দাঁড়ায় বাঙালিরা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। কিন্তু বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রতিহত করতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও স্থগিত করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য দেশবাসীকে প্রস্তুতি নিতে বলেন। মুক্তিযুদ্ধের আহ্বানও ঘোষিত হয়েছে ভাষণে। দেশের স্বাধীনতার অনন্য এই দিনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের অভিবাদন।