সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্ব নারী দিবস ও আমরা

রওশন জাহান সাথী

বিশ্ব নারী দিবস ও আমরা

আমরা প্রতি বছরই বিশ্ব নারী দিবস উদযাপন করি। অধিকার আদায় করার এক স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে সারা পৃথিবীতে নারীরা সোচ্চার হয়। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এ দিনটি নিজের করে পেয়েছি। এর গোড়ার কথা হলো, যেসব আন্দোলন সংগ্রাম মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে, এটি সেসবের অন্যতম প্রধান বিদ্রোহ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক সুঁই কারখানায় অকথ্য অত্যাচার চলত। নারী শ্রমিকদের ওপর অমানবিক নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারখানার কাজের বাইরে বেশি সময় তাদের হাতে থাকত না, জীবনমান বলতে কিছুই ছিল না। ক্ষত-বিক্ষত মন আর অবশ শরীর নিয়ে পরদিন আবার কাজে যোগ দিতে হতো। অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং খাদ্য অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ত। এভাবে এক দিন তারা মারাও যেত। আস্তে আস্তে চোখে চোখে তারা সংগঠিত হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিল। কথা বলার অপরাধে নির্যাতন, নিষ্পেষণ বাড়ত। প্রচন্ড সহ্যশক্তি তাদের পথ দেখিয়ে ছিল। তারা আটঘাট বেঁধে দাবিনামা তৈরি করে বিদ্রোহ শুরু করেছিল। সুঁই কারখানার নারীরা এ বিদ্রোহকে মাঠের আন্দোলনে পরিণত করেছিল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের এ চূড়ান্ত আন্দোলনের ন্যায্য দাবিনামা ছিল : মজুরি বৈষম্য, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, শিশুর সুরক্ষা, নিষ্ঠুর অমানবিক কর্ম-পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই সেই মিছিলে ও সার্বিক আন্দোলনে সরকারি বাহিনীর দমন পীড়ন শুরু হলো। অনেক শ্রমিক গুরুতর আহত হয়। অনেকে গ্রেফতার হয়, তারপরও মারমুখী হয়ে ওঠে। তারা ধারাবাহিক আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৮৬০ সালে তারা নারী শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে এবং দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল। জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ। এর পর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেন মার্কের কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। ক্লারা জেটকিন এ সম্মেলনে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায়। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই দিবসটি বিশাল আলোড়ন তুলেছে। নারী অধিকার, সমঅধিকার, মানবাধিকার আদায়ের এক প্রত্যয়দীপ্ত শপথ নেওয়ার দিন এই ৮ মার্চ। মুখর এ দিনটি নারীদের প্রাণের তারিখে পরিণত হয়েছে। এখনো থামেনি অত্যাচার নানা রূপে নানা কৌশলে নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। পশুত্ব মানুষকে অমানবিক করে তোলে যখন পুরুষ নারীর যৌথ উদ্যোগে দিবসটি পালনের পরিকল্পনা করা হয়। তখন মনে আশার সঞ্চার হয়, সমমর্যাদা অনুভূত হয়। আজ থেকে বহু বছর আগে যে নারীরা আত্মসম্মান রক্ষায় পথিকৃৎ, তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের নারীরা এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতা প্রবাহমান রেখেছে। কারণ সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। নতুন নতুন সমস্যায় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তবে মাঠের আন্দোলনের কোনো বিকল্প থাকে না। নারীরা যত বেশি ঐক্যবদ্ধ হবে, হিংসা বিদ্বেষ পরিহার করে সুস্থ প্রতিযোগিতায় নামবে তত বেশি অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজ এগিয়ে আসবে, নারীকে নারীদের ভালোবাসতে হবে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক সভাপতি, মহিলা শ্রমিক লীগ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর