সোমবার, ৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

রসুলুল্লাহর চোখে নারী অধিকার

মো. আবু তালহা তারীফ

রসুলুল্লাহর চোখে নারী অধিকার

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে মানবীয় মর্যাদায় সমাসীন করেছেন। তাঁর মেহনতী প্রচেষ্টায় নারীদের ঘৃণা, অবহেলা, নির্যাতন ও হত্যার মতো নিকৃষ্ট কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নারীরা পেয়ে যায় মুক্তির দিশা। রসুলুল্লাহ সর্বক্ষেত্রেই নারীদের সম্মান বাড়িয়ে দিলেন। কন্যা হিসেবে নারীকে দিলেন বিশেষ মর্যাদা। তিনি বলেন, যে ঘরে কন্যাসন্তান প্রথমে জন্মগ্রহণ করবে সেই ঘরে আল্লাহতায়ালা রহমত নাজিল করবেন। ঘোষণা করে দিলেন যার একটি কন্যাসন্তান আছে সে একটি জান্নাতের মালিক। তিনি নিজে তাঁর কন্যা সন্তানকে ভালোবেসে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন কীভাবে ভালোবাসতে হয় কন্যাদের। কোথাও গেলে মেয়ে ফাতিমাকে বলে যেতেন। ফিরে এলে প্রথমে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যে বাবা-মা কন্যাদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে বিচারের দিবসে এই কন্যাগণই তার জন্য জাহান্নামের আগুনের অন্তরায় হবে’ (মিশকাত শরিফ)।

কন্যা একজনের স্ত্রী হয়ে যায়। স্ত্রী হিসেবেও তার অধিকার নিশ্চিত করতে ভুলে যাননি রহমাতুল্লিল আলামিন। একজন স্বামীর ওপর তার স্ত্রীর অধিকারের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। স্বামী তার স্ত্রীর পূর্ণ মোহরানা আদায় করবে। খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে। স্ত্রীর মন প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করবে। স্ত্রীর হাত খরচ কিংবা বিভিন্ন সময়ে উপহার দেবে। পর্দা রক্ষা করে ঘুরতে যাওয়া ও নিকটাত্মীয়দের দেখা করার সুযোগ দেবে। শরিয়তের সব নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আমলে উৎসাহ দেবে। সর্বদা স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে’ (সুনানে তিরমিজি)।

একজন নারী প্রথমে কন্যার মর্যাদা পেল। এরপর স্ত্রীর মর্যাদা, পরবর্তীতে সন্তানের মা হয়ে মায়ের মর্যাদা পেল। তখন মা হিসেবে নারীর মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। মা হিসেবে নারীর সম্মান অতুলনীয়। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাকে সম্মান, মূল্যায়ন ও সদাচরণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রত্যেক সন্তান তার মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। খিদমত করবে এবং মায়ের পূর্ণ হক আদায় করবে। বুখারি শরিফের বর্ণনায়, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা, তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা, তাঁর হক নষ্ট করাকে চিরদিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ মায়ের মনে কষ্ট দিলে, তাঁর ভালো কথা অমান্য করলে সে যতবড়ই ব্যক্তি হোক না কেন তার জান্নাতে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে যাবে। কেননা রসুল বলেছেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। এ ব্যাপারে হজরত হাজেমা (রা.) নামক এক সাহাবি থেকে জানা যায়, তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে জিহাদে যাওয়ার পরামর্শ করার জন্য উপস্থিত হলাম। তখন রসুল বললেন, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম হ্যাঁ, ইয়া রসুলুল্লাহ। উত্তরে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তুমি ফিরে যাও এবং তোমার মায়ের সম্মান এবং খেদমতে নিজকে ব্যস্ত রাখ। কেননা তার দুই পায়ের নিচেই বেহেশত রয়েছে।’ মুসনাদে আহমাদ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে তার পিতা, মাতা, স্বামী, ভাই, সন্তান ও অন্যান্য সব আত্মীয়র কাছ থেকে অধিকার নিশ্চিত করেছেন। এ জন্য নারীকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদের মালিকানা করে দেওয়া হয়েছে। বিবাহের ক্ষেত্রে নারীই প্রথমে সম্মতি দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। নারীকে পর্দা রক্ষা করে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। নারীর অর্থনৈতিক সম্পদে স্বামীসহ অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এমনটা কোরআনে বলা আছে। কোরআনে রয়েছে ‘যা কিছু পুরুষরা অর্জন করবে, তা তাদেরই অংশ হবে; আবার নারীরা যা কিছু উপার্জন করবে, তাদেরই অংশ হবে’ (সুরা নিসা-৩২)। প্রিয় পাঠক, আসুন নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি। সর্বসময় সর্বজায়গায় নারীকে সম্মান করি। নারীকে অবহেলা নয়। মনে রাখব, এই নারী কারও মেয়ে, কারও বা স্ত্রী আবার কারও মমতাময়ী মা। রসুলুল্লাহর দেওয়া অধিকার নিশ্চিতে নিরাপত্তা পাবে নারী।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর