মঙ্গলবার, ৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

ইসলাম নারীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়েছে

এম এ মান্নান

ইসলাম নারীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়েছে

ইসলামে নারীর প্রাপ্য মর্যাদার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দুনিয়ার যে কোনো ধর্মের চেয়ে নারীর অধিকারের প্রতি ইসলাম সহানুভূতিশীল। জননী হিসেবে, কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে ইসলামে নারীর যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মে নেই। নারীর মর্যাদা সমুন্নত করতে সুরা নিসা নামে আল কোরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল করা হয়েছে। নারীসত্তাকে মহান আল্লাহ কতটা গুরুত্ব দেন এটি তারই প্রমাণ। সৃষ্টিজগতের মালিক মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনী ও তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ সুরা নিসা আয়াত ১। এ আয়াতে নারী ও পুরুষের সৃষ্টি একই উৎস থেকে তা স্মরণ করানো হয়েছে। আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীরা) তাদের পোশাকস্বরূপ।’ সুরা বাকারা আয়াত ১৮৭। নারীর অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নারীদের (পুরুষদের ওপর) তেমন ন্যায়সংগত অধিকার রয়েছে যেমন রয়েছে নারীদের ওপর পুরুষদের।’ সুরা বাকারা আয়াত ২২৮।

আল্লাহর কাছে কে নারী কে পুরুষ তা নয় বরং বান্দার গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয় করা হয় নেক আমল ও তাকওয়ার ভিত্তিতে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘ইমানদার অবস্থায় যে কেউ নেক আমল ও সৎকর্ম সম্পাদন করবে সে পুরুষ হোক অথবা নারী তাকে আমি অবশ্যই (দুনিয়ার বুকে) পবিত্র জীবন দান করব এবং পরকালের জীবনেও ওই নেক আমলের জন্য উত্তম বিনিময় দান করব।’ সুরা আন নাহল আয়াত ৯৭।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহেশত।’ দাম্পত্য জীবনে স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার বা হক যথাযথভাবে আদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম। হাদিসে বলা হয়েছে, সামর্থ্যবানের জন্য অন্যের পাওনা পরিশোধে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা জুলুম। এজন্য তার শাস্তি ও অকল্যাণ অবধারিত। স্ত্রীর ন্যায়সংগত অধিকার দেনমোহর ও খোরপোশ না দেওয়াও হাদিস অনুযায়ী স্বামীকর্তৃক স্ত্রীর ওপর জুলুমের শামিল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। কিয়ামতের দিন পর্যায়ক্রমে একে একে প্রত্যেক নারী-পুরুষকে বন্দী অবস্থায় সমবেত সব হাশরবাসীর সামনে হাজির করা হবে এবং বলা হবে, এ হচ্ছে অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে, যদি এর কাছে কেউ কিছু পাওনা থাক তবে আদায় করে নাও। এ সময় অধিকারহারা সেই নারী খুশি হবে, যে পিতা, ভাই ও স্বামীর কাছে স্বীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। সে তাদের কাছ থেকে নিজের পাওনা আদায় করে নেবে।  এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, ‘সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকবে না এবং একে অন্যের খোঁজখবর নেবে না।’ সুরা মুমিনুন আয়াত ১০১। তিনি আরও বলেন, সেদিন করুণাময় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজের হক ক্ষমা করে দেবেন, কিন্তু অন্য মানুষের পাওনা কিছুমাত্রও ক্ষমা করবেন না। এরপর আল্লাহ ওই নারী বা পুরুষকে হাশরবাসীর সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে দাবিদারদের বলবেন, ‘তোমাদের পাওনা বুঝে নিতে এগিয়ে এসো।’ রসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ ফেরেশতাদের নির্দেশ দেবেন ‘এর নেক আমল থেকে প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা অনুসারে দিয়ে দাও। এভাবে সব পাওনাদারকে দেওয়ার পর যদি অল্প পরিমাণও নেক আমল অবশিষ্ট থেকে যায় এবং সার্বিক আমলের নিরিখে সে যদি আল্লাহর প্রিয়পাত্র প্রমাণিত হয় তবে তার অবশিষ্ট নেক আমল বাড়িয়ে দেওয়া হবে যেন সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। পরিশেষে তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। আর সার্বিক বিচারে সে যদি পাপী প্রমাণিত হয় এবং তার কোনো সৎ কাজও অবশিষ্ট না থাকে তবে ফেরেশতারা আরজ করবে : ‘ইয়া আল্লাহ! এর সব পুণ্য ফুরিয়ে গেছে অথচ এখনো অনেক পাওনাদার রয়ে গেছে।’ আল্লাহ তখন বলবেন, ‘এর পাপের সঙ্গে পাওনাদারদের পাপসমূহ মিলিয়ে দাও এবং একে জাহান্নামে ফেলে দাও।’ প্রাচীন আরবে কন্যাসন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া হতো। সন্তানের লালনপালনকে জান্নাতের অসিলা হিসেবে ইরশাদ করেছেন রসুল (সা.)। বলেছেন, ‘যার তিনটি কন্যাসন্তান অথবা তিনটি বোন বা দুটি কন্যা বা দুটি বোন থাকবে, আর যদি সে তাদের প্রতি যত্নশীল হয় এবং তাদের হক সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করে তার জন্য বেহেশত অনিবার্য।’ তিরমিজি, আবু দাউদ।

নারীর যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করতে আল কোরআনে ‘নিসা’ বা ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটি ২৬ বার উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিসেও নারীর অধিকার, মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। কোরআনে নারীদের শিক্ষালাভের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ কর ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’  রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ হাদিসে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ।’ উম্মুস সহিহাইন ইবনে মাজাহ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবীর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। বুখারি।

 

                লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর