শনিবার, ১৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সুফিবাদ

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানবদেহে একটি বিশেষ অঙ্গ আছে, যা সুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ পরিশুদ্ধ থাকে আর অসুস্থ থাকলে সমগ্র দেহ অপরিশুদ্ধ হয়। জেনে রেখ এটি হলো কল্ব বা হৃদয়।’ আল্লাহর জিকির বা স্মরণে কল্ব কলুষমুক্ত হয়। সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কল্বকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর প্রেম অর্জন সুফিবাদের উদ্দেশ্য। যারা তাঁর প্রেম অর্জন করেছেন, তাদের তরিকা বা পথ অনুসরণ করে ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ অর্জন করাই হলো সুফিদর্শন। সুফিবাদ উৎকর্ষ লাভ করে প্রাচীন পারস্যে। সেখানকার প্রখ্যাত সুফি-দরবেশ, কবি-সাহিত্যিক এবং দার্শনিকরা নানা শাস্ত্র, কাব্য ও ব্যাখ্যা-পুস্তক রচনা করে এ দর্শনকে সাধারণ্যে জনপ্রিয় করে তোলেন। কালক্রমে বিখ্যাত অলিদের অবলম্বন করে নানা তরিকা গড়ে ওঠে। তার মধ্যে চারটি প্রধান তরিকা সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করে : ১. বড়পীর আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) প্রতিষ্ঠিত  কাদেরিয়া তরিকা ২. সুলতানুল হিন্দ খাজা মাইনুদ্দিন চিশতি (রহ.) প্রতিষ্ঠিত চিশতিয়া তরিকা ৩. হজরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দি (রহ.) প্রতিষ্ঠিত নকশবন্দিয়া তরিকা ও ৪. হজরত শেখ আহমদ মুজাদ্দিদে আলফে সানি সেরহিন্দ (রহ.) প্রতিষ্ঠিত মুজাদ্দেদিয়া তরিকা। এ ছাড়া সুহরাওয়ার্দিয়া তরিকা, মাদারিয়া,  আহমদিয়া ও  কলন্দরিয়া নামে আরও কয়েকটি তরিকার উদ্ভব ঘটে। বাংলাদেশে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত এ দেশে ইসলামের সর্বাধিক প্রচার ও প্রসার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে সুফিরা এসে বঙ্গদেশে সুফিবাদ প্রচার করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- শাহ সুলতান রুমি, বাবা আদম শহীদ, শাহ সুলতান বলখি, শাহ নিয়ামতুল্লাহ বুতশেকন, শাহ মখদুম রূপস, শেখ ফরিদউদ্দিন শক্করগঞ্জ, মখদুম শাহ দৌলা শহীদ (রহ.) প্রমুখ। মানবপ্রেমের কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ সুফিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এভাবে ক্রমে বঙ্গদেশে সুফিবাদ প্রসার লাভ করে। ১২০৪-৫ খ্রিস্টাব্দে  বখতিয়ার খলজি কর্তৃক বাংলাদেশ বিজিত হলে ইসলামের শরিয়ত ও মারিফত উভয় ধারার প্রচার ও প্রসার তীব্রতর হয়। শাসকশ্রেণির সঙ্গে বহু পীর-দরবেশ এ দেশে আগমন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। মুসলিম বিজয়োত্তর যে কজন সুফি-দরবেশ ইসলাম ও সুফিবাদ প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তার মধ্যে শেখ জালালুদ্দিন তাব্রিজি, শাহজালাল, শেখ আলাউল হক, খানজাহান আলী, শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা, শাহ ফরিদউদ্দিন (রহ.) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এঁরা সুফিবাদের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব চমৎকারভাবে তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেন। ফলে বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে এ মতবাদ প্রসার লাভ করে।           আজিমউদ্দিন আহমেদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর