রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
রৌদ্র ছায়ার নিচে

চেয়ার সবই জানে...

মাকিদ হায়দার

চেয়ার সবই জানে...

গত বছরের মাঝামাঝি একটি চমৎকার লেখা বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটির নাম ‘পাকিস্তানের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতেছিলেন যিনি’। লেখাটি পাঠান্তে অনেক তথ্য জানতে পেরেছি, যেগুলো আগে সেভাবে জানতাম না। ১৯৬৯ থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ছিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি। সুমন পালিত লেখাটিতে জানিয়েছিলেন নরঘাতকের জন্মবৃত্তান্ত। জন্ম ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৭ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ১০৪ বছর আগে পাঞ্জাবের ঢালওয়াল গ্রামে। ইয়াহিয়া ছিলেন পাখতুন সম্প্রদায়ের। যে সম্প্রদায় বা গোত্রের আর একজন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। নরঘাতক ইয়াহিয়া খান লেখাপড়া শেষ করেছিলেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পেয়েছিলেন ডিগ্রি স্নাতক অব্দি। ডিগ্রি লাভের পরপরই ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের দেরাদুন মিলিটারি একাডেমি থেকে ১৯৩৯ সালের ১৫ জুলাই কমিশনপ্রাপ্ত হন তিনি। ১৯৭১ সালেই আমরা না-পাক পাকিস্তানকে দাফন করেছিলাম আমাদের বাংলাদেশ থেকে তাও ৫০ বছর আগে। এ ৫০ বছরের ভিতরে বাংলাদেশের উত্থান ঈর্ষাজনক হলেও পাকিস্তান এখনো তার অর্থনীতি চাঙা করতে না পারায় কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন বাংলাদেশ থেকে শিখতে কীভাবে উন্নয়ন করতে হয়। অন্যদিকে তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে কটুকথা বলতেও দ্বিধা করেননি। ইমরান খান উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হলেও তার পূর্বসূরি আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার হিংস্রতা এখনো বিদ্যমান। এ ছাড়া না-পাক পাকিস্তানে আছে জাতিগত সমস্যা। বেলুচরা চাচ্ছে স্বাধীনতা। তারা পাঞ্জাবিদের অধীনে থাকতে রাজি নয়।

আমাদের দেশের পাকিস্তানি ভূত এখনো কারও কারও কাঁধে চেপে আছে যেমন ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে একটানা ১৬ বছর রাষ্ট্রযন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায়  ভূতগুলো  চেয়েছিল সাধের পাকিস্তানের সঙ্গে পুনর্বার হাত মেলাতে। তা যদি না হবে ’৭৫ সালের পর আমরা দেখলাম তখনকার রাষ্ট্রপতি কতিপয় বাংলাদেশবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীকে বানালেন মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী। শাহ আজিজুর রহমান হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। যিনি ’৭১ সালে পাকিস্তানের সপক্ষে বক্তব্য দিয়েছিলেন জাতিসংঘে গিয়ে। তাকেই দেখলাম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে! দেখলাম জয়পুরহাটের কুখ্যাত কসাই আবদুল আলিমকে মন্ত্রী হতে। জিয়াউর রহমানের কল্যাণে পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধার কমিটির প্রধান গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে এলেন তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে। সেই যে এলেন তিনি আর ফিরে গেলেন না তার নিজ দেশে। এমনকি তিনি ভুলেই গেলেন পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধার করার কথা। জিয়াউর রহমান পর্ব শেষ হওয়ার পর জনাব এরশাদ এসে কর্ম-অপকর্ম দুটোই করলেন। নব্বই দশক শুরু হওয়ার প্রাক্কালে আমরা দেখলাম স্বৈরচার এরশাদের পতন। যেমন পতন দেখেছিলাম আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার। একনায়কতন্ত্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই আমরা দেখেছি। কিন্তু একনায়কতন্ত্র দীর্ঘস্থায়ী হয়নি যেমন হয়নি এশিয়ার অনেক দেশেই। লৌহমানব ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রপতি ফার্নান্দো মার্কোস। তাকেও একদিন পালিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল আমেরিকার হাউয়াই দ্বীপে, যে আমেরিকা তাকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছিল সেই আমেরিকাই তাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল আশির দশকের মাঝামাঝি।

১৯৮১ সালে আমি ফিলিপিন্সের ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ ও মানবসম্পদের ওপর লেখাপড়া করতে গিয়েছিলাম নেদারল্যান্ডস সরকারের বৃত্তি নিয়ে। সে বছরের অক্টোবরের কোনো একদিন লৌহমানব মার্কোসের জন্মদিন পালিত হয়েছিল। আমাদের ছাত্রাবাস ছিল ম্যানিলার ‘প্রজেক্ট সিক্স’ থেকে মাইল ২-৩ উত্তরে। সেই অক্টোবরের সাতসকালেই আমরা লক্ষ্য করলাম হেলিকপ্টারের ভিতর থেকেও মার্কোসের জন্মদিনের কাগজ ফেলা হচ্ছে। সেখানে দেখলাম মার্কোস একটি কবিতা লিখেছেন আর একটি কবিতা লিখেছেন তার স্ত্রী ইমেলদা মার্কোস। সেই ইমেলদা সেই মার্কোস একদিন দেশত্যাগে বাধ্য হলেন। ম্যানিলা এয়ারপোর্টে মি. অ্যাকুইনোকে হত্যার কলকাঠি নাড়েন মার্কোস। অ্যাকুইনো ছিলেন বিরোধী দলের নেতা। যেমন ইয়াহিয়া হত্যা করতে চেয়েছিলেন ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে থাকলেও ফিরে এসেছিলেন তাঁর জন্মভূমি সোনার বাংলায়। মার্কোসের মৃতদেহ রয়ে গেছে হাওয়াই দ্বীপে।

আমাদের দেশে হাওয়াই দ্বীপ না থাকলেও আছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সোনা দ্বীপ। আমি সোনা দ্বীপে না গেলেও গিয়েছিলাম সেন্ট মার্টিনে। একা নই। সঙ্গে ছিলেন ছড়াকার আসলাম সানী, ছড়াকার রহিম শাহ, আবদুল গনি মিয়া, মণি আলতাফ এবং বাটিকশিল্পী ও গায়ক সৈয়দ একতেদার আলী, মুন্সী কবির, ফারুক প্রধান, মোহাম্মদ আন্তানুর হকসহ অনেকেই। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সমগ্র বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ’। আন্তর্জাতিক পর্ষদ’-এর উদ্যোগে এবার আমরা প্রথমে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বিশাল র‌্যালি ও বঙ্গবন্ধুর নামে ঘুড়ি উৎসব করলাম। উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইউনিয়ন কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানসহ কয়েক শ মানুষ।

প্রতিদিন সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৩ হাজার থেকে প্রায় ৪ হাজার লোক ভ্রমণে যায়। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব, সে সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বানিয়েছেন ‘সমুদ্রবিলাস’ নামের একটি রিসোর্ট। যার অবস্থান সমুদ্রের পুব পাড়ে। আমরা সদলবলে যখন সেই সমুদ্রবিলাস রিসোর্ট দেখতে গেলাম তখন ছড়াকার আসলাম সানী সমুদ্রবিলাসের ম্যানেজার সেলিম খানের কাছ থেকে জানতে চাইলেন রিসোর্টটি দেখভালের দায়িত্ব কার। সেলিম খান জানালেন ‘অন্যপ্রকাশের’ মালিক মাজহারুল ইসলামের ওপর। মাজহারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে সেলিম খানকে বলে দিলেন আমাদের সবাইকে ডাব খাওয়াতে। খাওয়ার পর কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানালেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সমস্যাবলির কথা।

১. সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হাসপাতাল থাকলেও কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নেই। এমনকি গুরুতর যে কোনো রোগীকে ৩ ঘণ্টায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নিয়ে যেতে হয় টেকনাফে। সেখান থেকে বেশ কয়েক মাইল পাড়ি দিয়ে নিয়ে যেতে হয় কক্সবাজারে। অনেক সময় রাস্তায় কিংবা সমুদ্রের জাহাজেই মারা যায় রোগী। ২. এ দ্বীপে একটি ব্যক্তিগত বিদ্যুৎ কোম্পানি থাকলেও সেটি যেহেতু সোলারে পরিচালিত তাই প্রতি ইউনিটের দাম দিতে হয় ৩২ থেকে ৪২ টাকা, যেখানে অন্যান্য জেলায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ে ৮.৪৯ থেকে ১০.৪৯ পয়সা। ৩. দ্বীপে একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুল থাকলেও এমনকি সেই স্কুলে ছাত্রছাত্রী ৩৫০ থেকে ৪০০ থাকলেও শিক্ষক আছেন একজন। অথচ খাতা-কলমে শিক্ষক পাঁচজন। একজন শিক্ষক টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে সপ্তাহে এক দিন আসেন অথচ আমরা জানি, বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৭৪.৭%। এও জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭০ হাজার ঘরহীনকে ঘর দিয়েছেন। দেশের শতভাগ লোক বিদ্যুৎ প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে। সে ক্ষেত্রে সেন্ট মার্টিন বোধ করি শিক্ষা ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এমনকি স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রেও। ৪. স্কুলটিতে বিজ্ঞান, ইংলিশ, অঙ্ক শেখানোর মতো কোনো শিক্ষকই নেই, শিক্ষক না থাকলেও খাতা-কলমে যে কজন আছেন তারা নিয়মিত বেতন ও সরকারি সুযোগ-সুবিধে ভোগ করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে দৃষ্টি দিতে পারে বলে আমি মনে করি। মনে করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সজাগ হবে। এমনকি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ও। ৫. সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কোনো জমি ব্যাংক মর্টগেজ নেয় না, এমনকি দ্বীপটিতে কোনো ব্যাংকও নেই। ব্যবসায়ীদের লেনদেন করতে হয় কখনো টেকনাফে গিয়ে, কখনো কক্সবাজার গিয়ে। ৬. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ নেই। ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার লোকের যাবতীয় বর্জ্য রাস্তাঘাটে, সমুদ্রের পাড়ে। ৭. দুঃখের বিষয় দ্বীপটির ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেই। দ্বীপের দুই অংশের উত্তর-পশ্চিমে ভাঙন ধরেছে। সামুদ্রিক ঝড়ে, জলোচ্ছ্বাসে যে কোনো দিন ১০-১২ হাজার লোক নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, যেতে পারে। নেই সাইক্লোন আশ্রয় কেন্দ্র। আছে প্রতিটি বাড়িতেই রিসোর্ট। ওই রিসোর্ট ভাড়া দিয়েই মৌসুমের সময় মালিকরা যা কিছু উপার্জন করেন। বর্ষা মৌসুমে সংসার চালানোই কষ্টকর। জানালেন আমাকে হীরাঝিল রিসোর্ট সেন্ট মার্টিনের  মালিক। ৮. এ দ্বীপে কোনো কলেজ নেই। ছেলেমেয়েদের টেকনাফ অথবা কক্সবাজারে পড়াতে অভিভাবকদের হিমশিম খেতে হয়। হতে হয় আর্থিক অনটনের সম্মুখীন। ৯. নামে মাত্র হাসপাতাল থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সও নেই, নেই ডাক্তার। ১০. সমস্ত বাংলাদেশে এমনকি অন্যান্য দ্বীপে দৈনিক পত্রিকা গেলেও সেন্ট মার্টিনে যায় না, এমনকি সেখানে কোনো টেলিভিশন দেখারও সুযোগ নেই। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে। ১১. স্থানীয় মাছ শিকারিদের আয়ের উৎস একমাত্র সাগর। যে সাগরে জাল ফেলে মাছ ধরে কোনোরকমের দিনাতিপাত। সেই মাছ শিকারিদের কোনো সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা নেই। এমনকি বাড়িঘর নির্মাণের জন্য দ্বীপে সিমেন্ট-রড পাওয়া যায় না, ফলে অধিকাংশ বাড়িঘরই খড় দিয়ে বানানো। উল্লেখ্য, পর্যটন ব্যবসার সবটুকুই নিয়ন্ত্রণ করেন ঢাকার ব্যবসায়ীরা, স্থানীয়রা টাকার অভাবে কোনো কিছুই করতে পারেন না। মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বললেন, ‘এ বিষয়ে আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ইউনিয়ন কাউন্সিলর হিসেবে আমি মনে করি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনাই লাঘব করতে পারবেন। যেমন করেছেন পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য।’ দুই রাত কাটিয়ে ফিরে এলাম কক্সবাজারে। এর আগে কয়েকটি স্যুভেনির প্রকাশিত হয়েছে আসলাম সানীর সম্পাদনায় ক. মুজিববর্ষে প্রাণ স্পর্শে খ. এ বিজয় মুজিবমেয় গ. মুজিববর্ষে উন্নয়ন স্পর্শে ঙ. স্বাধীনতায় মুজিব বিশ্বময়। আমরা ১৪ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, কক্সবাজার, বান্দরবান ঘুরে এলাম। বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ আন্তর্জাতিক পর্ষদের আয়োজনে এর আগে আরও অনেক শহরেই উদ্যাপিত হয়েছে আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সৌহার্দ্যপূর্ণ উদ্যোগে। কক্সবাজারে গিয়ে দেখা হলো কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বিশিষ্ট ছড়াকার আমিরুল ইসলাম আর বান্দববানে দেখা হলো ছড়াকার আনজির লিটনের সঙ্গে। ছড়াকার চারজনই বাংলা একাডেমির ফেলো। রহিম শাহ ছড়াকার, কক্সবাজার থেকেই ফিরে গিয়েছিলেন ঢাকা। উপস্থিত ছয়জনই আমরা ছিলাম বাংলা একাডেমির ফেলো, মুহম্মদ নূরুল হুদা, মাকিদ হায়দার, আমিরুল ইসলাম, আসলাম সানী, রহিম শাহ ও আনজির লিটন। যেহেতু সবাই একই আদর্শের পথিক তাই আমাদের সব অনুষ্ঠান সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবেই হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনেক দিন বলেছিলেন একটি মহামূল্যবান কথা। ‘যাদের আদর্শ নাই, নীতি নাই, যারা দুর্নীতিবাজ, যারা দেশকে ভালোবাসে না তারা যদি প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে যায় তাতে প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয় না, প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হয়।’ শোষক পাকিস্তান থেকে আমরা বেরিয়ে হয়েছি স্বাধীন জাতি, আমরা পাকিস্তানের চেয়ে অর্থনীতিতেও অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার।

প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে সব খোঁজখবর রাখা সম্ভব নয় বলেই আমার বিশ্বাস। কিন্তু যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের গদিআঁটা চেয়ারে বসে উপদেশ বিতরণ করেন তারা কেউই জানেন না সেন্ট মার্টিন নামের একটি দ্বীপ আছে কক্সবাজারের অধীন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা এমনকি বিদ্যুৎ বিতরণকারী মন্ত্রী মহোদয়রা জানেন না ওই দ্বীপটিতে না আছে শিক্ষা, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, ব্যাংকসহ বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যবস্থা। উচ্চপদস্থদের চেয়ার সবই জানে, চেয়ার যেহেতু নির্বাক তাই বলতে পারে না সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দুঃখ-কষ্টের কথা।

রবীন্দ্রনাথের দেখা ও রাষ্ট্র সম্পর্কে কয়েকটি উক্তি। ক. দেশকে জানো, ‘দেশকে ভালোবাসিবার প্রথম লক্ষণ ও প্রথম কর্তব্য দেশকে জানা’। খ. আমরা দেশকে যতই ভালোবাসি না কেন দেশকে ঠিকমতো কেউ কোনো দিন জানি না। গ. দেশে জন্মালেই দেশ আপন হয় না, যতক্ষণ দেশকে না জানি ততক্ষণ সে দেশ আপনার নয়। ঘ. যখন দেশকে মা বলে আমরা গলা ছেড়ে ডাকি তখন মুখে যা-ই বলি, মনে মনে জানি যে মা গুটিকয় আদুরে ছেলের মা।

ওপরের সব কথা নির্বাক চেয়ারগুলো ভালো করেই জানে যা শুধু বলতে পারে না। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইউনিয়ন কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের আর্তি, হৃদয়ে বেদনার কথা। যেমন পাকিস্তানের দম্ভপ্রিয় জেনারেলরা ভেবেছিল পূর্ব পাকিস্তান তাদেরই থাকবে। জানত চেয়ার পূর্ব পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান না থেকে হবে শেখ মুজিবের সোনার বাংলাদেশ।

            লেখক : কবি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর