মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দাম্ভিকতা থেকে দূরে থাকার তাগিদ দিয়েছে ইসলাম

মুহম্মাদ আশরাফ আলী

কোনো মানুষের দাম্ভিক হওয়া অনুচিত। কারণ মানুষ সব ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। কাজেই এক মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে দাম্ভিক আচরণ করবে এটি মহান স্রষ্টার পছন্দনীয় নয়। আল্লাহ বান্দাদের দাম্ভিকতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে- ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করিও না; নিশ্চয় আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। (সুরা লোকমান : ১৮)। দাম্ভিকতা মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে। জুলুম করার মনোভাব গড়ে ওঠে দাম্ভিকতার কারণে। ইমাম মুসলিম (রহ.) হজরত আয়াজ ইবনে আম্মার (রা.)-এর রেওয়াতে বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ ওহির মাধ্যমে আমার কাছে নির্দেশ পাঠিয়েছেন, নম্রতা ও হেয়তা অবলম্বন কর। কেউ যেন অন্যের ওপর গর্ব ও অহংকারের পথ অবলম্বন না করে এবং কেউ যেন কারও ওপর জুলুম না করে। (মাযহারি)। নিজেকে বড় ভাবার বা অহংকার করার কোনো সুযোগই নেই মানুষের। একমাত্র আল্লাহর পক্ষেই অহংকার করা সাজে। কারণ তিনি সব ক্ষমতার উৎস। হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর এক রেওয়ায়েতে হাদিসে কুদসিতে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, বড়ত্ব আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার লুঙ্গি। যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে এগুলো কেড়ে নিতে চায় আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। (চাদর ও লুঙ্গি বলে পোশাক বোঝানো হয়েছে। আল্লাহতায়ালা দেহিও নন বা দৈহিক অবয়ববিশিষ্টও নন যে, পোশাক দরকার হবে। তাই এখানে আল্লাহর মহত্ত্বগুণ বোঝানো হয়েছে। যে ব্যক্তি এ গুণে আল্লাহর শরিক হতে চায় সে জাহান্নামি)। অহংকারীদের পরিণাম যে ভয়াবহ সে সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে রসুল (সা.)-এর হাদিসে। তিনি বলেছেন, যারা অহংকার করে কেয়ামতের দিন তাদের ক্ষুদ্র পিপীলিকার সমান মানবাকৃতিতে উত্থিত করা হবে। তাদের ওপর চতুর্দিক থেকে অপমান ও লাঞ্ছনা বর্ষিত হতে থাকবে। তাদের জাহান্নামের একটি কারা প্রকোষ্ঠের দিকে হাঁকানো হবে, যার নাম বুলস। তাদের ওপর প্রখরতর অগ্নি প্রজ্বালিত হবে এবং তাদের পান করার জন্য জাহান্নামিদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ রক্ত ইত্যাদি দেওয়া হবে। (তিরমিজি)। অহংকারীদের আখেরাতের জীবনে কঠিন সাজার সম্মুখীন হতে হবে। জান্নাত থাকবে তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (মুসলিম)। দাম্ভিক বা অহংকারী হওয়ার বদলে বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন ইসলামের মহানবী (সা.)। খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে শুনেছি, যে ব্যক্তি বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে, আল্লাহতায়ালা তাকে উচ্চ করে দেন। ফলে সে নিজের দৃষ্টিতে ছোট, কিন্তু অন্য সবার দৃষ্টিতে বড় হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি অহংকার করে, আল্লাহ তাকে হেয় করে দেন। ফলে সে নিজের দৃষ্টিতে বড় হলেও অন্য সবার দৃষ্টিতে কুকুর ও শূকরের চেয়েও নিকৃষ্ট হয়। (মাযহারি)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে অহংকার এবং দাম্ভিকতা থেকে দূরে থাকা ও বিনয়ী হওয়ার তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর