শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

শিশুদের ভালোবাসতে বলেছেন রসুল (সা.)

মুফতি মাহমুদুল হক জালীস

শিশুদের ভালোবাসতে বলেছেন রসুল (সা.)

শিশুরা কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তারা পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিষ্পাপ। তাদের মনোজগৎ পবিত্রতায় ভরপুর। তাই তাদের ভালোবাসতে হবে। ভুলত্রুটি করলে শুধরে দিতে হবে। নির্যাতন বা মারধর করা যাবে না। হত্যা করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ কাউকে নরহত্যার অপরাধ ছাড়া হত্যা করলে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ বাঁচালে সে যেন গোটা মানব জাতিকে বাঁচাল।’ সুরা মায়িদা আয়াত ৩২। এভাবে কোরআন শিশু হত্যাকে নিষিদ্ধ করেছে। আল্লাহ কোরআনে আরও বলেন, ‘যেসব লোক নিজেদের সন্তানদের হত্যা করেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ সুরা আনআম আয়াত ১৪০।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে শিশুদের ভালোবাসতেন এবং অন্যদের ভালোবাসতে উৎসাহিত করতেন। শিশুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিল অতুলনীয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে আমার উম্মত নয় যে ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না।’ আবু দাউদ।

শিশু নির্যাতন যেন না হয় সেজন্য আগে থেকেই কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি বলুন! এসো, আমি তোমাদের ওইসব বিষয় পাঠ করে শোনাই যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে অংশীদার কোর না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদয় ব্যবহার কর, স্বীয় সন্তানদের দারিদ্র্যের কারণে হত্যা কোর না, আমি তোমাদের ও তাদের খাবার দিই, নির্লজ্জতার কাছেও যেও না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন তাকে হত্যা কোর না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদের এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বোঝ।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ১৫১।

শিশুর প্রতি সব সময় দয়া প্রদর্শন করা, তাদের আদর-সোহাগ করা, মায়ামমতা দেখানো উচিত। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘এক ব্যক্তি একটি শিশু নিয়ে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে এসে শিশুটিকে চুমু দিতে লাগলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দৃশ্য দেখে জিগ্যেস করলেন, শিশুটির প্রতি কি তোমার দয়া জেগে উঠেছে? সে বলল হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসুল! তারপর রসুলুল্লাহ বললেন, আল্লাহ তোমার প্রতি এর চেয়েও অধিক দয়া করবেন। কেননা তিনি দয়ালুদের দয়ালু।’ বুখারি।

শিশুরা পবিত্রতার মূর্তপ্রতীক। তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখালে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মহব্বত দেখালে জান্নাত আবশ্যক হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে একদা এক মহিলা দুটি কন্যাসন্তান নিয়ে এলেন। তিনি তাদের তিনটি খেজুর দিলেন। মহিলা দুই সন্তানকে দুটি খেজুর দিলেন। আর একটি খেজুর নিজে খাওয়ার জন্য মুখে দিতে যাবেন এমন সময় বাচ্চারা সেটিও খেতে চাইল। মহিলা খেজুরটি দুই টুকরা করে সন্তানদের দিয়ে দিলেন। যা হজরত আয়েশা (রা.)-কে আশ্চর্য করল। তিনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। রসুল বললেন, হে আয়েশা! আল্লাহ এ স্ত্রীলোকটিকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন অথবা এর বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।’ মুসলিম।

আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তোলা আমাদের কর্তব্য। কারণ শিশুরা মানব জাতির অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শৈশব থেকেই তাদের জীবনের গতিপথ নির্ধারিত করে দিতে হবে। পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে বেড়ে ওঠার। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছেন।’ সুরা নাহল আয়াত ৭২।

লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীর চর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর