রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মধ্য-শাবান রাতে আল্লাহ বান্দাদের ক্ষমা করেন

আবদুর রশিদ

লাইলাতুল বরাত বা শবেবরাতকে পুণ্যময় রাত বিবেচন করা হয়। শাবান মাস ধারণ করে গুনাহ থেকে মুক্তিলাভের এ রাতকে। শাবানকে রমজান আহ্বানকারী মাস হিসেবেও অভিহিত করা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ছাড়া শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা আদায় করতেন। ১৫ শাবানের রাতকে রহমতের রাত হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘১৫ শাবানের রাতে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টজীবের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং হিংসুক ও খুনি ছাড়া অন্য বান্দাদের ক্ষমা করে দেন।’ মুসনাদে আহমাদ।

লাইলাতুল বরাতে আল্লাহ বান্দাদের জন্য তাঁর রহমতের দরজা খুলে দেন। এ রাতে আল্লাহ বান্দার ভাগ্য নির্ধারণ করেন। তাদের পাপ ক্ষমা করেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজকের রজনীতে (শবেবরাতে) কী কী হয় তোমরা কি জান? আয়েশা (রা.) বললেন, আপনি বলুন এ রজনীতে কী কী হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজকের রজনীতে আগামী এক বছরে পৃথিবীতে আগমনকারী আদমসন্তানদের নাম লেখা হয়। আগামী এক বছরে পৃথিবী থেকে কে কে বিদায় নেবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রজনীতে মানুষের আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। মানুষের রিজিক আল্লাহর কাছ থেকে বরাদ্দ হয়।’ বায়হাকি।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শাবানের ১৫তম রাতে নামাজ পড় এবং পরবর্তী দিনে রোজা রাখ। কেননা সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং আহ্বান করতে থাকেন- আছ কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব? আছ কি কোনো রিজিক যাচনাকারী, আমি তাকে রিজিক দেব? আছ কি কোনো বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দেব? আছ কি এমন কেউ এমন কেউ ইত্যাদি।’ ইবনে মাজাহ, বায়হাকি।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : এ রাতে আল্লাহতায়ালা মাফ করে দেন উম্মতের গুনাহখাতা; কিন্তু সাত শ্রেণির মানুষের এ রাতে কোনো প্রকার অংশ থাকে না। ১. জাদুকর ২. শরাবখোর ৩. জিনাকারী ৪. আত্মীয়তা ছিন্নকারী ৫. মা-বাবার নাফরমান ৬. পরনিন্দাকারী ৭. কৃপণ; হিংসুক যে তিন দিনের বেশি অন্য মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রাখে। এদের কখনো মাফ করা হয় না।’

শবেবরাতের করণীয় সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘১৫ শাবান তোমরা রাত জেগে ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ।’ শবেবরাত উপলক্ষে করণীয় : রাত জেগে ইবাদত করা যেমন নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইসতিগফার ইত্যাদি।

আল্লাহর রহমত অর্জনের এ রাতে নফল ইবাদত করা উত্তম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু নফল ইবাদত নিজের ঘরে করতেন সেহেতু শবেবরাতে নিজের ঘরে ইবাদত করা উত্তম। এ রাতে কবর জিয়ারত করাও উত্তম। এ রাতে বাজি পোড়ানোসহ গর্হিত সব কার্যকলাপ থেকেও বিরত থাকা উচিত। আল্লাহ আমাদের শবেবরাতে সুন্নাত অনুযায়ী ইবাদতের তৌফিক দান করুন।

সর্বশেষ খবর