বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

হে ব্যবসায়ী রোজায় দ্রব্যমূল্য বাড়াবেন না

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে ব্যবসায়ী রোজায় দ্রব্যমূল্য বাড়াবেন না

করোনার টিকা আবিষ্কারের পর আমরা ভেবেই নিয়েছি, মহামারী করোনা বুঝি এবার লেজ গুটিয়ে পালাবে। তাছাড়া গরমে করোনা বিদায় নেবে বলেও এতদিন বলাবলি করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিলেন মাবুদ রাব্বানা। পবিত্র কোরআনের সুরা বুরুজের ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘ফাআলুল্লিমা ইউরিদ। তাঁর ইচ্ছে মতোই সবকিছু হয়’। প্রেমময় প্রভুর ইচ্ছে, করোনা আরও কিছুদিন পৃথিবীবাসীকে হুঁশিয়ার করবে। পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী নবী-রসুলদের ইতিহাসে পাওয়া যায়, আল্লাহর জলজ্যান্ত আজাব দেখেও তারা সতর্ক হতো না, হাসি-তামাশা করত। করোনা এসে সে দৃশ্যই আমাদের চোখে দেখিয়ে দিয়েছে। করোনার মতো আজাব দেখেও আমরা হুঁশিয়ার হচ্ছি না। সতর্ক, হেদায়াত শব্দগুলো যেন আমাদের জন্য না। আমরা যে যার মতো পারছি পাপের সাম্রাজ্য গড়ে তুলছি। আমাদের সম্পর্কেই সুরা শোয়ারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘পাপে ডুবে থাকার ফলে মানুষের মন পাথর হয়ে যায়। ভয়ংকর আজাব চোখে দেখা না পর্যন্ত তারা সতর্ক হয় না। আমার আজাব যখন তাদের পাকড়াও করে, তখন তারা বলে হে আল্লাহ! আমাদের কি আরেকটু সুযোগও দেবেন না’ (সুরা শোয়ারা-২০০-২০৩)। আসলেই আল্লাহ তো বান্দাকে সুযোগ দেনই। সত্যি বলতে আমাদের পুরো জীবনই একটা সুযোগ। হাদিস শরিফে এসেছে, মৃত্যুর গড়গড়া শব্দ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ বান্দার তওবা কবুল করেন। হায়! এত দীর্ঘ সুযোগ পাওয়ার পরও যখন আল্লাহর আজাব আমাদের ঘিরে ফেলে তখন আমরা আরেকটু সুযোগ চাই। এটা আমাদের চরম গাফিলতির প্রমাণ।

করোনার প্রথম ঢেউ শেষে আমরা যারা বেঁচে আছি, এটা আসলে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে একটি অফুরন্ত সুযোগ। হয়তো এবার আমাদের কারও পালা। হতে পারে কিছু সময় পরই আমাদের কারও সামনে আজরাইল ফেরেশতা মৃত্যুর পরওয়ানা নিয়ে এসে দাঁড়াবেন। তখন কোরআনে বলা পূর্ববর্তী পাপীদের মতোই আমরা বলব, হে আল্লাহ! আমাদের আরেকটু সুযোগ দিন। তখন তো আল্লাহ বলবেন, বান্দা! তোমাকে কত সুযোগ দিয়েছি ভেবে দেখ। এবারও যদি তোমাকে সুযোগ দেওয়া হয় তাহলেও তুমি সেই পাপের রাজ্যেই হারিয়ে যাবে। তোমাকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।

পাঠক! আমাদের অন্তর কত কঠিন এবং আল্লাহবিমুখ গাফেল হয়ে গেছে চিন্তা করলেও আঁতকে উঠতে হয়। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী এমন নাজুক সময়েও আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা মাহে রমজান উপলক্ষে দ্রব্যমূল্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রেখেছেন। সাধারণ মানুষ একবেলা খেলে আরেকবেলা না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী নব্বই শতাংশ ব্যবসায়ী ভাই কিন্তু নামাজি, দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা। দীনদার এসব মানুষ দুই টাকা বেশি লাভের আশায় আপামর জনসাধরণকে কষ্ট দিচ্ছে, রোজাদার মানুষকে বিপদে ফেলার কালো স্বপ্ন বুনছে, এসব যেন কোনোভাবেই বিশ^াস হতে চায় না। কিন্তু বাস্তবচিত্র এমনটিই। হে আমার ব্যবসায়ী ভাই। আমাদের কষ্ট দিয়ে কত টাকাই বা মুনাফা করবেন। আপনি কি দেখেননি, কোটি কোটি টাকার মালিক বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।

            লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির        সোসাইটি। পীর সাহেব আউলিয়ানগর।

সর্বশেষ খবর