শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সেন বংশ

সেন বংশ ১২৮ বছর অর্থাৎ ১০৯৭ থেকে ১২২৫ সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করে। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে একাদশ শতকের অন্তিমলগ্নে পাল বংশের অবসান ঘটিয়ে সেনদের উত্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে  বরেন্দ্রে ‘সামন্তচক্রের’ বিদ্রোহের সুযোগ নিয়ে সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেন পশ্চিমবঙ্গে ক্রমে স্বীয় আধিপত্য বিস্তার করেন এবং অবশেষে মদন পালের রাজত্বকালে স্বাধীন সত্তার বিকাশ ঘটান। বাংলায় সেন শাসনের বিশেষ তাৎপর্য হলো সেনরাই সর্বপ্রথম সমগ্র বাংলার ওপর তাদের নিরঙ্কুশ শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। আধুনিক মহীশূর, কর্ণাটক ও অন্ধ্র প্রদেশের কানাড়ি ভাষাভাষী অঞ্চলকে তাদের আদিনিবাস হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তারা ছিলেন ব্রাহ্ম-ক্ষত্রিয় অর্থাৎ তারা প্রথমে ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং পরে ব্রাহ্মণ বৃত্তি ত্যাগ করে ক্ষত্রিয় বৃত্তি গ্রহণ করেন। বিজয় সেনের দেওপাড়া প্রশস্তিতে বলা হয়েছে, চন্দ্রবংশীয় বীর সেন এবং অন্যরা কর্ণাট অঞ্চলে শাসন করতেন। এ বংশোদ্ভূত সামন্ত সেনের বংশধররাই বাংলায় শাসন করেন। সেনরা কখন বাংলায় এসে শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত করেন তার সঠিক তথ্য নির্দেশ করা খুবই দুরূহ। দেওপাড়া লিপিতে বলা হয়েছে, ব্রাহ্ম-ক্ষত্রিয় কুলতিলক সামন্ত সেন রামেশ্বর সেতুবন্ধ পর্যন্ত যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করে কর্ণাট লক্ষী লুণ্ঠনকারী দুর্বৃত্তদের দমন করেন। কিন্তু জীবনসায়াহ্নে তিনি গঙ্গাতটে বসতি স্থাপন করেন। এ উক্তি থেকে প্রতীয়মাণ হয়, সামন্ত সেন তাঁর প্রথম জীবন কর্ণাট অঞ্চলে অতিবাহিত করেন এবং সেখানে কিছুটা প্রতিপত্তির অধিকারীও ছিলেন। তবে তিনি শেষ জীবনে বাংলায় আসেন এবং গঙ্গার তীরে কোথাও বসবাস করেন। বল্লাল সেনের নৈহাটি তাম্রশাসনে বলা হয়েছে, সামন্ত সেনের জন্মের আগেই সেন বংশের কোনো এক পূর্বপুরুষ পশ্চিমবঙ্গে বসতি গড়ে তুলেছিলেন। সামন্ত সেনের বংশধররা পরে বাংলায় এ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। সেনরা কীভাবে বাংলায় আসেন তার সদুত্তর দেওয়া অসম্ভব। এ ব্যাপারে সেন লিপিমালায় কোনো তথ্য নেই। অনুমান করা হয়, সেনরা কর্ণাট থেকে বাংলায় আসেন এবং পাল বংশীয় রাজাদের অধীনে উচ্চ রাজকার্যে নিয়োজিত হন। পাল বংশ দুর্বল হয়ে পড়লে তারা বাংলার শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর