সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ধৈর্যশীলতা রসুল (সা.) এর একটি সুন্নত

মুহাম্মদ আশরাফ আলী

ধৈর্যশীলতা মুমিনদের ভূষণ। এটি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন ধৈর্যশীলদের একজন। বিপদ-আপদে, দুঃসময়ে তিনি ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। কোনো অবস্থায়ই বিচলিত হননি। আল্লাহর ওপর যারা ভরসা রাখেন তারা বিশ্বাস করেন আল্লাহ যেমন বিপদ দেন, তেমনি মসিবত থেকে রক্ষা করার মালিকও তিনি। ধৈর্যশীলতার জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল চরম প্রতিকূল অবস্থাকে জয় করার। ধৈর্যশীলতার কারণেই তিনি মহান আল্লাহর তরফ থেকে পুরস্কৃত হন। চারদিকের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি কখনো হতাশ হননি। অনুসারীদেরও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই শিক্ষা দিয়েছেন। সহজাতভাবে প্রাচীন আরববাসীর মধ্যে অধৈর্যের প্রবণতা থাকলেও তিনি তাদের সে প্রবণতা থেকে বের করে আনেন। মুমিনদের ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেওয়া হয়েছে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক হাদিসে।

সুহাইব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মুমিন ব্যক্তির ব্যাপারই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজই তার জন্য কল্যাণকর। এটা (সৌভাগ্য) মুমিন ছাড়া আর কারও হয় না। সে দুর্দশাগ্রস্ত হলে ধৈর্য ধারণ করে, তা তার জন্য কল্যাণকর। সুদিন দেখা দিলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম থেকে মিশকাতে)।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক স্ত্রীলোককে অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি তাকে বলেন : আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর। সে বলল, নিজের পথে কেটে পড়। তুমি তো আর আমার মতো বিপদে পড়নি। সে নবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতে পারেনি। তাকে বলা হলো, তিনি নবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ফলে সে (ভীত-শঙ্কিত হয়ে) নবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়ির দরজায় হাজির হলো। সেখানে সে কোনো দ্বাররক্ষী দেখতে পেল না। সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। নবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : বিপদের প্রথম আঘাতে ধৈর্য ধারণই হচ্ছে প্রকৃত ধৈর্য (বোখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি নাসাঈ, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মানুষের অপছন্দনীয় জিনিস জান্নাতকে এবং আকর্ষণীয় জিনিস দোজখকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ, দারিমি, মুসনাদে আহমাদ)। অর্থাৎ কামনা-বাসনা ও আরাম-আয়েশের গলায় ছুরি না চালানো পর্যন্ত কোনো মুসলমান জান্নাতের হক আদায় করতে পারে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি হালাল-হারামের বাছ-বিচার না করে নিজের কুপ্রবৃত্তির দাস হয়ে যায় তার জন্য দোজখের দরজা উন্মুক্ত হয়ে যায়।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর