সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সেন বংশ

হেমন্ত সেনের পুত্র বিজয়সেন বাংলায় সেন বংশের স্বাধীন শাসনের সূচনা করেন। তার লিপিমালা থেকে অনুমিত হয় যে, তিনি  রাঢ় অঞ্চলে পাল বংশের একজন অধীন নৃপতি ছিলেন। যে চৌদ্দজন সামন্ত নৃপতি  রামপালকে বরেন্দ্র পুনরুদ্ধারে সাহায্য করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন ছিলেন নিদ্রাবলীর বিজয়রাজ। মনে হয় এই বিজয়রাজ ও সেন বংশীয় বিজয়সেন অভিন্ন। বাংলায় পাল শাসনের দুর্বলতার পরিপূর্ণ সুযোগ নেন বিজয়সেন। কৈবর্তদের সঙ্গে যুদ্ধের মাধ্যমে বরেন্দ্র পুনরুদ্ধারে রামপালকে সহায়তা করার প্রতিদান হিসেবে তিনি রাঢ়ে স্বাধীন শাসকের মর্যাদা লাভ করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি পালদের পরাজিত করে গৌড়ের সিংহাসন দখল করেন। তার রানী বিলাসদেবী ছিলেন শূর বংশের রাজকন্যা। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতম সাক্ষ্য দেয় যে, এগারো শতকের গোড়ার দিকে দক্ষিণ রাঢ়ে শূর বংশের অস্তিত্ব ছিল। একই সূত্রে রামপালের সামন্তদের তালিকায় অপর-মন্দারের লক্ষ্মীশূরের নাম পাওয়া যায়। অপর-মন্দারের সঙ্গে হুগলি জেলার মন্দারনকে অভিন্ন মনে করা হয়। শূর বংশের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে বিজয় সেন রাঢ়ের ওপর স্বীয় ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। তিনি সম্ভবত উড়িষ্যারাজ অনন্তবর্মণ চোড়গঙ্গের সঙ্গেও মৈত্রী স্থাপন করেন। এই মৈত্রী অবশ্যই তার রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ায়। আনন্দভট্টের বল্লালচরিতে তাকে ‘চোড়গঙ্গসখ’ বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই যে, রামপালের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই বিজয় সেন বাংলায় তার স্বাধীন ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন। বিজয় সেন যে গৌড়েশ্বরকে দ্রুত পলায়নে বাধ্য করেন তিনি ছিলেন অবশ্যই শেষ পাল রাজা মদনপাল। মদনপালের ক্ষমতা তখন শুধু উত্তর বাংলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল। মনহলি তাম্রশাসন থেকে জানা যায়, মদনপালের ক্ষমতা উত্তর বাংলায় অব্যাহত ছিল তার অষ্টম রাজ্যাঙ্ক অর্থাৎ ১১৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। খুব সম্ভব ১১৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দের পরে কোনো এক সময় বিজয়সেন উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম বাংলায় তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। বিজয়সেন পশ্চিমে বিহার এবং পূর্বে ‘বঙ্গ’ (দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা) পর্যন্ত রাজ্যসীমা সম্প্রসারিত করেন বলে উল্লেখ আছে। বর্মণদের রাজধানী  বিক্রমপুর থেকে বিজয়সেনের ব্যারাকপুর তাম্রশাসন প্রকাশিত হয়েছিল।   জাফর খান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর