মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

রসুলের (সা.) সুন্নত নেক আমলের রূপরেখা নির্ধারক

আল্লামা মাহ্মূদুল হাসান

সুন্নতের মাধ্যমে আমলের সুরত-দেহ গঠিত হয় এবং আমলের আসল রূপরেখা ফুটে ওঠে। এ ছাড়া আমলের প্রকৃত রূপ নির্ধারণের অন্য কোনো উপায় নেই। উপমাস্বরূপ, যদি এক স্থানে মানুষ, গরু, ছাগল, ভেড়া, পাখি, বিড়াল, কুকুর এবং বাঁদর রাখা হয় তাহলে এগুলোর পরিচয়ের কী উপায় হতে পারে? এগুলোর প্রতিটির মধ্যেই তো অদৃশ্য আত্মা ক্রিয়াশীল, সুতরাং আত্মার মাধ্যমে পরিচয় লাভ করা যাবে না। হ্যাঁ অভিজ্ঞ ব্যক্তি জাহেরি সুরত এবং আকৃতি দেখা মাত্রই প্রত্যেকের পরিচয় সম্পর্কে অতি সহজে পরিচয় লাভ করতে পারবে। হ্যাঁ যে বেকুফ, গ-মূর্খ অথবা মাতাল সে বুঝতে অক্ষম হতে পারে। ডারউইনের মতবাদে মানুষ বানরের উন্নত রূপান্তর। তার এ উদ্ভাবন এককালে সমাদৃত হলেও বর্তমানে প্রত্যাখ্যাত। এককালের মহাজ্ঞানী ডারউইন আজ অবিবেচক, বিভ্রান্ত বলে পরিচিত। জাহেরি আকৃতির খোদায়ী পরিচিতিকে বাদ দিয়ে কঙ্কালের পেছনে পড়েই ডারউইন তাঁর মহত্ত্ব হারিয়েছেন এবং হারাতে থাকবেন। অথচ একজন সাধারণ মানুষ সুন্নতি দাড়ি দেখেই বলতে পারে সে মুসলিম কিনা?

রসুলের সুন্নত নেক আমলের রূপরেখা নির্ধারক। কাজেই সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। যদি দেহই না থাকে তাহলে আত্মা তার ক্রিয়া প্রকাশ করবে কোথায়? তাই যেমন আত্মার ক্রিয়ার জন্য দেহের গুরুত্ব অপরিসীম তেমনি আমলের মধ্যে ইখলাসের জন্য সুন্নতের গুরুত্বও অপরিসীম। কেননা সুন্নতই মূলত আমলের দেহ তৈরির উপাদান। সুন্নতবিহীন আমল বিদাতের নামান্তর। আর শিরক যেমন ইমানকে বিনষ্ট করে তেমনি বিদাত আমলকে বিনষ্ট করে দেয়। বুখারির হাদিস দ্বারা সুন্নতের এরূপ গুরুত্বই প্রমাণিত হয়। এক হাদিসে রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে আমাদের মতো নামাজ পড়ে, আমাদের কিবলামুখী হয়, আমাদের তরিকায় জবাইকৃত গোশত ভক্ষণ করে সে-ই মুসলিম। সে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নিরাপত্তাধীন। সুতরাং তোমরা সে নিরাপত্তায় হস্তক্ষেপ কোর না।’

এ হাদিসের দৃষ্টিতে নামাজ দুই ভাবে আদায় করার সন্ধান পাওয়া যায়- ক. রসুলের সুন্নত মোতাবেক নামাজ পড়া। খ. রসুলের সুন্নত তরক করে নামাজ পড়া। উভয়ের প্রতিদান ও পরিণাম সম্পর্কেও কোরআন-হাদিস ও পূর্বসূরিদের ঘটনাবলিতে যথেষ্ট তথ্যাদি পাওয়া যায়। আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আপনি আপনার প্রতি ওহিকৃত কিতাব তিলাওয়াত করুন এবং নামাজ কায়েম করুন! নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।’

ইখলাস ও সুন্নত মোতাবেক নামাজ কেবল দেহ ও আত্মাকেই আবর্জনামুক্ত করে না, বরং তা অন্তরে নুর প্রবিষ্ট হওয়ার কারণ হয়। এরই অন্য নাম অন্তর্দৃষ্টি। কবরে, হাশরে, পুলসিরাতে অতি অন্ধকারে এ নামাজ আলো দান করবে। এজন্যই মুসলিমের হাদিসে নামাজকে নুর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। নামাজ এসব কঠিন মুহূর্তে নামাজির পক্ষে কার্যকর ওকালতি করবে বলে হাদিসে বর্ণিত আছে।

 

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর