মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
ইতিহাস

বল্লাল সেন

বিজয় সেনের পর তাঁর ছেলে বল্লাল সেন রাজা হন। এ যাবৎ বল্লাল সেনের আমলের দুটি লিপি (নৈহাটি তাম্রশাসন ও সনোখার মূর্তি লিপি) আবিষ্কৃত হয়েছে। লিপিদ্বয়ে বল্লাল সেনের কোনো রাজ্যজয়ের উল্লেখ নেই। তবে তাঁর কিছু সামরিক কৃতিত্ব ছিল। অদ্ভুতসাগরে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি গৌড়রাজের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। পাল বংশের রাজা গোবিন্দ পালকে এ গৌড়রাজ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত আনন্দ ভট্টের বল্লালচরিতেও এ তথ্যের অনুমোদন মেলে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পাল বংশীয় শেষ রাজা গোবিন্দ পাল ১১৬০ খ্রিস্টাব্দে রাজ্যহারা হন। এই সময়ে বল্লাল সেন যে সিংহাসনে উপবিষ্ট তা লিপি প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। সুতরাং মগধে পালদের শেষ আঘাত হানার কৃতিত্ব বল্লাল সেনের। অদ্ভুতসাগরে উল্লেখ আছে, তাঁর বাবার জীবদ্দশায় বল্লাল সেন মিথিলা জয় করেন। বাংলায় কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনের সঙ্গে বল্লাল সেনের নাম জড়িত আছে। সাধারণ বিশ্বাস, সামাজিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনে বল্লাল সেন কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেন। এ ব্যবস্থায় মুষ্টিমেয় লোককে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা হয়, তারা অভিজাত ও কুলীন হিসেবে পরিগণিত হন। কুলগ্রন্থ বা কুলজি শাস্ত্র হচ্ছে কৌলিন্য প্রথার আদি ইতিহাস জানার উৎস। বস্তুত বল্লাল সেনের রাজত্বকালের পাঁচ-ছয় শ বছর পর প্রণীত এসব গ্রন্থ প্রমাদন্ডআকীর্ণ ও স্ববিরোধিতাপূর্ণ। সুতরাং কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কিত এসব তথ্য প্রশ্নাতীত নয়। এর ওপর সেন আমলের কোনো লিপিসূত্রে কৌলিন্য প্রথা সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। আঠারো ও উনিশ শতকের বাংলার ব্রাহ্মণদের মধ্যে কৌলিন্য প্রথার গভীর প্রভাব সুবিদিত। সুতরাং খুবই স্বাভাবিক যে কৌলিন্য প্রথার প্রবক্তারা এর একটা ঐতিহাসিক ভিত্তি দেওয়ার প্রয়াস চালাবেন এবং সে প্রয়াস থেকেই তারা হিন্দু রাজা বল্লাল সেনের আমলে এ প্রথার উদ্ভব হয়েছে বলে প্রচার চালান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর