বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

টেক্সাস ট্র্যাজেডি

সন্তানদের ওপর নজরদারির বিকল্প নেই

আশা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। প্রতিকূল অবস্থাও জয় করার সাহস জোগায়। আর হতাশা ঠিক এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে মানবজীবনে। ফলে অনুকূল পরিবেশেও কেউ হতাশার শিকার হলে আত্মহননের মনোভাব তার মধ্যে দানা বেঁধে ওঠা বিচিত্র কিছু নয়। যে কারণে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের চেয়েও উন্নত দেশগুলোয় হতাশার আগ্রাসন এবং আত্মহননের প্রবণতা বেশি। বাঙালি সমাজের হাজারো বছরের ইতিহাসে পারিবারিক সম্পর্ক গুরুত্ব পেয়েছে। বিচ্ছিন্ন থাকার বদলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকা প্রাধান্য পেয়েছে সব সময়। একান্নবর্তী পরিবারকে আদর্শ বলে ভাবা হয় বাঙালি সমাজে। কালের বিবর্তনেও সে মনোভাবের খুব একটা পরিবর্তন না ঘটলেও যান্ত্রিক জীবনের জটিলতায় পারিবারিক বাঁধনে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা দিচ্ছে মূল্যবোধের সংকট। হতাশার অন্ধকার নেশা আরও ঘন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তরুণসমাজকে। ফলে সন্তানের হাতে বাবা-মায়ের মৃত্যু ঘটেছে

এ রাজধানীতেই। এর চেয়ে বেশি ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের অবতারণা ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এক বাংলাদেশি পরিবারের হতাশায় নিমগ্ন দুই তরুণ। তারা তাদের বাবা-মা, বোন ও নানিকে গুলি করে হত্যার পর নিজেরাও একে অন্যকে গুলি করে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। দুই তরুণের একজন তার সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছে, চার বছর আগেই সে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। এজন্য পরীক্ষায় ফেলও করেছে। প্রতিদিন সে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের শরীরে আঘাত করে বিষণ্ণতার দুঃখবোধ লাঘবের পথ খুঁজেছে। বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন থাকায় বন্ধুরা তার সংস্পর্শ ত্যাগ করেছে। একপর্যায়ে সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ভেবেছে আত্মহত্যা করলে গোটা পরিবার সারা জীবন দুঃখ পাবে। তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে মারা যাওয়ার কথা তার মনে দানা বেঁধে ওঠে। সে তার বড় ভাইকেও এ ব্যাপারে প্রভাবিত করে। তারপর বন্দুক কিনে প্রথমে বাবা-মা, নানি ও বোনকে গুলি করে হত্যার পর দুই ভাই একে অন্যকে গুলি করার সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে এক বাঙালি পরিবারের হতাশাগ্রস্ত দুই তরুণের আত্মহননের ঘটনা হতাশা বা বিষণ্ণতার কুপ্রভাব কত ভয়ংকর হতে পারে তা স্পষ্ট করেছে। এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি রোধে সব বাবা-মাকেই সন্তানদের দিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। তাদের কেউ যাতে বিষণ্ণতা ও নেশার ফাঁদে পা না দেয় সেজন্য সতর্কতারও বিকল্প নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর