শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

লক্ষ্মণ সেন

বল্লাল সেন বৃদ্ধ বয়সে পুত্র লক্ষ্মণ সেনের ওপর রাজ্যভার অর্পণ করে সস্ত্রীক গঙ্গাতীরে ত্রিবেণির নিকটবর্তী একটি স্থানে শেষ জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি প্রায় ১৮ বছর (আনু. ১১৬০-৭৮ খ্রিস্টাব্দ) সগৌরবে রাজত্ব করেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই লক্ষ্মণ সেন বেশ অধিক বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর রাজত্বকাল প্রশংসনীয় সাহিত্যকর্মের জন্য খ্যাত। তিনি নিজে সংস্কৃত ভাষায় অনেক শ্লোক রচনা করেন এবং পিতার আরব্ধ ‘অদ্ভুতসাগর’ সম্পূর্ণ করেন। তাঁর রাজসভা গীতগোবিন্দম্ প্রণেতা জয়দেব, শরণ, পবনদূত রচয়িতা ধোয়ী এবং সম্ভবত গোবর্ধন প্রমুখ প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকের দ্বারা অলঙ্কৃত ছিল। তাঁর রাজত্বকালে বটুদাসের ছেলে শ্রীধর দাস (লক্ষ্মণ সেনের সঙ্গে শ্রীধর দাসের বন্ধুত্ব ছিল) সদুক্তিকর্ণামৃত নামক কাব্যসংগ্রহ সংকলিত করেন। তাঁর প্রধান অমাত্য ও প্রধান বিচারপতি হলায়ুধ মিশ্র ‘ব্রাহ্মণসর্বস্ব’ রচনা করেন। দেওপাড়া প্রশস্তিকার উমাপতিধর রাজ্যের একজন অমাত্য এবং লক্ষ্মণ সেনের অন্যতম সভাকবি ছিলেন। লক্ষ্মণ সেন ছিলেন বৈষ্ণব মতবাদের কঠোর অনুসারী। তিনি ‘পরমবৈষ্ণব’ বা ‘পরমনরসিংহ’ উপাধি ধারণ করেন। তাঁর ধর্মমত পরিবর্তন সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায় না। লক্ষ্মণ সেন তাঁর অসামান্য গুণাবলি ও দানশীলতার জন্য খ্যাত ছিলেন। ‘তবকাত-ই-নাসিরি’র লেখক মিনহাজ-উস-সিরাজ তাঁর দানশীলতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বাংলার ‘মহান রায়’ হিসেবে অভিহিত এবং সুলতান কুতুবুদ্দিনতুল্য বিবেচনা করেন। তাঁর শাসনামলের শেষ দিকে অবশ্য লক্ষ্মণ সেন রাজকার্য পরিচালনায় অশক্ত হয়ে পড়েন। এ সময় সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা ও সংহতির অভাব পরিলক্ষিত হয়। সমসাময়িক লেখসূত্রে সেন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কতগুলো বিদ্রোহী প্রধানের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আভাস পাওয়া যায়। এ প্রক্রিয়া সেন সাম্রাজ্যের সংহতিতে চির ধরায় ও পরিণামে এর পতন ঘটায়। শেষ আঘাত হানেন মুহাম্মদ  বখতিয়ার খলজি (১২০৪ খ্রিস্টাব্দ)। অবশ্য দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় লক্ষ্মণ সেন আরও কিছু দিন রাজত্ব করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর