শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

অও উপজাতি

অও আসাম অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একটি উপজাতি। একসময় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামেও এদের বিস্তার ছিল। ১৯৩১ সালের আদমশুমারি অনুসারে অওদের লোকসংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৭৭৫। বর্তমানে তাদের সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। এ উপজাতির মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে অধিক।

অও উপজাতি তিনটি শাখায় বিভক্ত- চোঙলি, মোঙসেন ও চঙকি। প্রতিটি শাখাই আবার একাধিক উপশাখায় বিভক্ত। অন্যান্য উপজাতির চেয়ে অওরা আকৃতিতে বেশ লম্বা, গড়ে প্রায় ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। এদের গায়ের রং তামাটে, কেশ কুঞ্চিত। দেহ যথেষ্ট লোমশ। অওদের নাক চ্যাপ্টা, মুখম-ল বিস্তৃত, কিছুটা মঙ্গোলীয়দের মতো। অও পুরুষরা সাধারণত স্বল্প কাপড় পরিধান করে। মেয়েদের পরিধেয় বস্ত্রের মাপ ১ থেকে দেড় গজ লম্বা ও ২০ থেকে ৩০ ইঞ্চি চওড়া। পরার কায়দা অনেকটা লেংটির মতো। অবিবাহিত মেয়েরা ফিতা দিয়ে বুক বাঁধে। বিবাহিতা মেয়েদের বুক থাকে উন্মুক্ত। উৎসবের সময় মেয়েরা বিচিত্র পোশাক পরে। পুরুষ ও নারী সবাই প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত লতাপাতা, চামড়া, পাখির পালক ও নানারকম পাথরের অলঙ্কার পরিধান করে। অওরা খুবই শান্তিপ্রিয়। প্রতিরোধ মনোভাবের অভাবের ফলে এরা প্রায়ই উর্বর এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে অনাবাদি পার্বত্য ভূমিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তবে অওরা বেশ কলহপ্রিয়। কলহ এদের একটি বিনোদন বিশেষ। অওরা শিকারি নয়, কৃষিজীবী। এদের প্রধান খাদ্য ভাত। ধান-চাল ধন-সম্পত্তি সম্মানের পরিচায়ক। এরা  জুম চাষ প্রথায় জমি আবাদ করে। ধান ছাড়া তুলা চাষও এদের মধ্যে ব্যাপক প্রচলিত। তুলা থেকে এরা নিজেরাই নিজেদের কাপড় বানায়। অওরা চোরাগর্ত খুঁড়ে হরিণ ও অন্যান্য প্রাণী শিকার করে। দলবদ্ধভাবে এরা বাঘ ও হাতি শিকার করে। অওরা প্রায় সর্বভুক।

অওদের ধর্মে নৈতিকতা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। এদের ধর্ম কিছু পূজা-অর্চনা ও বলি প্রথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেবতাকে তুষ্ট ও অপদেবতাকে প্রতিহত করার জন্য এরা অহরহ বলি দেয়। আত্মা, পরজন্ম, জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে এদের ধারণা খুবই সরল। অওরা সমগোত্রীয়দের মধ্যে বিয়ে করে না। বিয়ের আগে একজন অও পাত্র প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত পাত্রীর সঙ্গে কিছুকাল সহবাস করে। পছন্দ হলে পাত্রীর মা-বাবা পাত্রপক্ষের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। পছন্দ না হলে প্রস্তাব আসার আগেই পাত্রীর সঙ্গত্যাগ করতে হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর