শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান

বাংলায় প্রথম স্বাধীন মুসলিম সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ (১৩৩৮-১৩৪৯)। তাঁর রাজধানী ছিল ঐতিহাসিক  সোনারগাঁয়। মামলুক শাসনাবসানের পর যখন সমগ্র বাংলা দিল্লির তুঘলক সুলতানের করায়ত্ত ছিল তখন তিনি স্বাধীন শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন।

ফখরুদ্দিন ছিলেন জাতিতে তুর্কি। তিনি ছিলেন দিল্লির তুঘলক সুলতানের অধীন সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খানের অস্ত্রাগারের তত্ত্বাবধায়ক। ১৩৩৭ খ্রিস্টাব্দে বাহরাম খানের মৃত্যুর পর ফখরুদ্দিন সোনারগাঁর শাসনক্ষমতা করায়ত্ত করেন। এক বছর পর ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে স্বাধীন সুলতান ঘোষণা করেন।

ফখরুদ্দিন ১৩৩৮ খ্রিস্টাব্দে নিজেকে স্বাধীন সুলতান ঘোষণা করলে দিল্লির সুলতান মুহম্মদ তুঘলকের নির্দেশে লখনৌতির শাসনকর্তা কদর খান, সাতগাঁয়ের শাসনকর্তা আইজ্জুদ্দিন ইয়াহিয়া তাদের সম্মিলিত বাহিনী নিয়ে বিদ্রোহী ফখরুদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। কারার আমির ফিরোজ খান দিল্লির সুলতানের পক্ষে তার সেনাবাহিনী পাঠান। কদর খানের নেতৃত্বে এ সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ফখরুদ্দিন পরাজিত হন। রাজধানীর বিপুল ধনসম্পদ ও বহুসংখ্যক হাতি তাঁর হস্তগত হয় (১৩৩৯)। বর্ষার শুরুতে মিত্রবাহিনীর সেনারা স্ব স্ব অঞ্চলে ফিরে যায়। কদর খান তাঁর বাহিনীর বেশির ভাগ সেনাকে রাজস্ব আদায়ের কাজে মফস্বল এলাকায় পাঠিয়ে দেন। দিল্লি সুলতানের জন্য ধনসম্পদ আহরণ ও সঞ্চয়ের অজুহাতে লোভী ও অর্থলিপ্সু কদর খান রাজধানী সোনারগাঁয়ে প্রাপ্ত সমুদয় ধনসম্পদ আত্মসাৎ করেন। এমনকি তিনি যুদ্ধলব্ধ সম্পদে সেনাদের বিধানমাফিক প্রাপ্য থেকেও বঞ্চিত করেন। তাঁর সেনারা ছিল ক্ষুব্ধ। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজধানী লখনৌতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের ব্যবস্থাও তিনি রক্ষা করতে পারেননি। এদিকে সোনারগাঁ অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞ ফখরুদ্দিন অপেক্ষা করছিলেন বর্ষা মৌসুমের। বর্ষা শুরু হতেই তিনি তাঁর নৌবহর নিয়ে অগ্রসর হন এবং জলপথে কদর খানকে সোনারগাঁয়ে অবরুদ্ধ করেন।

ফখরুদ্দিনের নৌবাহিনী কর্তৃক রাজধানী সোনারগাঁ অবরোধ স্বভাবতই কদর খানের পতন অনিবার্য করে তোলে। কিন্তু ফখরুদ্দিন কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি।

সর্বশেষ খবর