বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

রমজানে নাজিল হয় আল কোরআন

মো. আমিনুল ইসলাম

রমজানে নাজিল হয় আল কোরআন

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব রসুল (সা.)-কে অগণিত মোজেজা -সম্পন্ন আসমানি কিতাব আল কোরআন দান করেছেন। আল কোরআনের প্রতিটি আয়াত মানব জাতির জন্য পথনির্দেশনা। রমজান মাসে এ গ্রন্থ নাজিল হয়। আল্লাহ বলেন, ‘রোজার মাস এমন একটি মাস যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। আর এ কোরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য পথের দিশা, সত্যপথের নির্দেশনা, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী’ সুরা বাকারা আয়াত ১৮৫। আল্লাহ আরও বলেন, ‘এ সেই মহাগ্রন্থ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক।’ সুরা বাকারা আয়াত ২।

কোরআনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

এক. অলৌকিকত্ব : কোরআনে যেসব কথা বিস্তৃত হয়েছে তা সভ্যতার এ যুগে মানুষ তথা জ্ঞানী-বিজ্ঞানী সব মানুষের জ্ঞানের আঁধার। মানবদেহ, আকাশ ও নভোমন্ডল, সৌরজগৎ, বিপর্যয় সবকিছু সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট করে উল্লিখিত আছে। কোরআনের সবচেয়ে বড় অলৌকিকত্ব হলো এর ভাষা, শব্দচয়ন ও পঠন। পৃথিবীর কোনো সাহিত্যিক বা পাঠক শত চেষ্টা করেও কোরআনে বিবৃত একটি শব্দ সংযোজন বা বিয়োজন আজ পর্যন্ত কী করতে পেরেছে? না পারবে? এটা কখনই সম্ভব নয়; কারণ মহান আল্লাহ স্বয়ং এর রচয়িতা। সুরা ইউনুসের ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা কী বলে, সে তা রচনা করেছে? বল, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সুরা আনয়ন কর এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার আহ্বান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ সুরা বনি ইসরাইলের ৮৮ নম্বর আয়াতে বিবৃত হয়েছে, ‘বল, যদি এ কোরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করে তবু তারা এরূপ কিছু আনয়ন করতে পারবে না।’

দুই. সংরক্ষণ : কোরআনকে আল্লাহ নিজের কাছে লৌহে মাহফুজে সংরক্ষিত করে রেখেছেন। সুরা হিজরের ৯ নম্বর আয়াতে বিবৃত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং নিশ্চিতরূপেই আমি তার সংরক্ষক।’ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে ও যে কোনো সময়ে অজুর সঙ্গে কোরআন পাঠ ও কোরআন খতম করা মোমিন মুসলমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

তিন. কোরআন সমগ্র মানব জাতির জন্য : কোরআন নাজিলের আগে আল্লাহ রব্বুল আলামিন জাতি বা কওমন্ডভেদে কিতাব বা সহিফা পাঠিয়েছেন; যা পরবর্তীতে কোরআন নাজিলের পর বাতিল বলে গণ্য হয়। দাউদ নবীর অনুসারীদের জন্য ‘জাবুর’, মুসা নবীর অনুসারীদের জন্য ‘তাওরাত’ এবং ঈসা নবীর অনুসারীদের জন্য ‘ইনজিল’ দান করেছিলেন। আর মহাগ্রন্থ কোরআন রসুল (সা.)-এর ওপর সমগ্র মানব জাতির কল্যাণ ও পথনির্দেশনা হিসেবে প্রেরিত হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোরআন হচ্ছে সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহতায়ালার সত্য বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা।’ সুরা ইউনুস আয়াত ৩৭। ‘কোরআন হচ্ছে মূলত ইমানদারদের জন্য হেদায়েত গ্রন্থ ও মানুষের যাবতীয় রোগব্যাধির নিরাময়।’ সুরা হামিম সাজদা আয়াত ৪৪।

চার. মুক্তির দিশারি আল কোরআন : বিপৎসংকুল ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়পূর্ণ এ পৃথিবীর সব যুগের মানুষের জন্য সত্য, কল্যাণ ও মুক্তির একমাত্র দিশারি হলো মহাগ্রন্থ আল কোরআন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের পক্ষ থেকে উপদেশসংবলিত একটি কিতাব এসেছে। এটা হচ্ছে মানুষের অন্তরে যেসব ব্যাধি রয়েছে তার নিরাময় এবং মোমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত।’ সুরা ইউনুস আয়াত ৫৭।

‘এ হচ্ছে এমন একটি বরকতময় কিতাব যা আমি নাজিল করেছি, অতএব তোমরা এর অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, আশা করা যায় তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করা হবে।’ সুরা আল আনয়াম আয়াত ১৫৫।

কোরআনের ওপর আলোচনা এত সংক্ষিপ্ত পরিসরে কখনো সম্ভব নয়। কোরআন পাঠ ও এর তাফসির জানার মধ্য দিয়ে কোরআনের নির্দেশিত পথে চলে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারলে তবেই পরকালে পাওয়া যাবে পরম শান্তি ও আল্লাহর ওয়াদাকৃত জান্নাত। আল্লাহ বলেন ‘এ মহাগ্রন্থ হচ্ছে মোমিনদের জন্য হেদায়েত ও সুসংবাদ।’ সুরা বাকারা আয়াত ৯৭।

সুতরাং আমরা কোরআন পাঠ ও কোরআনে বিধৃত আদেশ-নিষেধ মেনে যেন ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজজীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনা করতে পারি আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।

                লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর