রবিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

আরমানিটোলার অগ্নিকান্ড

কেমিক্যাল গোডাউন না সরানোর খেসারত

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আরমানিটোলায় কেমিক্যাল গুদামে আগুন লেগে অন্তত ২৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। তার মধ্যে রয়েছেন ইডেন কলেজের ইংরেজি তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া।  তার মা-বাবা, ছোট ভাইবোন ও দুলাভাইয়ের অবস্থাও সংকটাপন্ন। মারা গেছেন কেমিক্যাল দোকান ও গোডাউনে ভরা ভবনটির কেয়ারটেকার, একজন সিকিউরিটি গার্ড এবং এক আত্মীয়। ২৬ মাস আগে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭১ নিরপরাধ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর পুরান ঢাকা থেকে সব কেমিক্যাল গুদাম অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু সে তোড়জোড় যে ছিল নির্ঘাত প্রহসন তা আরমানিটোলার অগ্নিকান্ডে প্রমাণিত হলো। ২৬ মাসেও চকবাজারের ‘চুড়িহাট্টা গণহত্যার’ হোতাদের সাজা দেওয়া দূরের কথা তাদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় চুড়িহাট্টার ভয়াবহ ঘটনার পর অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত কীভাবে হলো, এর দায় কার তা নির্ণয়ে যথারীতি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে চুড়িহাট্টা ও সংলগ্ন এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোর কসরত শুরু হয়। অভিযান শুরু হয় বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে। কিন্তু পুরো তৎপরতাই আইওয়াশ ছিল কি না সে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। কারণ অগ্নিকান্ড সম্পর্কিত মনোযোগ একটু কমতেই স্থগিত হয়ে যায় রাসায়নিক গুদাম সরানোর অভিযান। নিহতের মধ্যে তিনজনের লাশ গত ২৬ মাসেও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় করা মামলার ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। চুড়িহাট্টা বিপর্যয়ের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম উচ্ছেদে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালানো হলেও কাক্সিক্ষত ফল মেলেনি। কেমিক্যাল দোকান ও গুদাম নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের কথা বলা হলেও তার বাস্তবায়ন কবে হবে তা অনিশ্চিত। স্পষ্টভাবে বলা যায়, কেমিক্যাল ব্যবসা ও গুদাম স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন না করায় আরও ২৬ জনকে এর খেসারত দিতে হলো। আরমানিটোলা অগ্নিকান্ডের শুধু তদন্ত নয়, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীদের দায় নির্ধারণেরও দাবি জানাই আমরা। ক্ষতিগ্রস্তদের সবার প্রতি  আমাদের আন্তরিক সহানুভূতি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর