সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বরকতময় ইফতার

মুফতি রুহুল আমীন কাসেমী

বরকতময় ইফতার

ইফতার অর্থ উপবাস ভঙ্গ করা। ভোর থেকে সারা দিন রোজা পালন শেষে সূর্যাস্তের পর, প্রথম যে পানাহারের মাধ্যমে উপবাস ভঙ্গ করা হয়, তাকে ইফতার বলা হয়। আর খাদ্য ও পানীয়কে ইফতারি বলা হয়। যথাসময়ে ইফতারি প্রস্তুত করে সামনে নিয়ে আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় থাকা সুন্নত। এ সময় বান্দার প্রতিটি আমল আল্লাহর কাছে বড় পছন্দনীয় এবং যে কোনো দোয়া আল্লাহপাক কবুল করে থাকেন। আল্লাহর রহমতের ফেরেশতারা রোজাদার বান্দার দোয়ার সঙ্গে আমিন আমিন বলতে থাকেন। আল্লাহ রোজাদার বান্দাকে নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করতে থাকেন। প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রোজাদারের জন্য দুটি খুশি, একটি ইফতারের সময়, অর্থাৎ আল্লাহর হুকুমে মজাদার ইফতারি খেয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে আনন্দিত হওয়া, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়, অর্থাৎ আল্লাহর কাছ থেকে রোজার বিনিময় লাভ করে আনন্দিত হওয়া। (মুসলিম শরিফ)। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে। (তিরমিজি)। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, যতদিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে। (বোখারি)। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে। খেজুর না হলে পানি দ্বারা, নিশ্চয়ই পানি পবিত্র। (তিরমিজি আবু দাউদ)

ইফতারের সময় যে কোনো দোয়া কবুল হয়। আম্মাজান হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন। আল্লাহর রসুল ইফতারের সময় এ দোয়া বেশি বেশি করতেন এবং উম্মতকেও এই দোয়া করতে তাকিদ দিয়েছেন। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্না। অর্থাৎ হে আল্লাহ আপনি দয়াময়, ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে বড় পছন্দ করেন। আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। এই দোয়া করবে, হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার রিজিক দ্বারাই ইফতার করেছি। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেন না। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে, তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই, আমরা কীভাবে এ ফজিলত লাভ করব। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পানি মিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা একঢোক ঠান্ডা পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। আর যদি কেউ রোজাদারকে তৃপ্তি সহকারে আহার করায়, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের ময়দানে আমার হাউজে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার আগ পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না (মুসনাদে আহমদ) রমজান মাস সহমর্মিতা ও সমবেদনার মাস। মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মজবুত করার মাস। তাই ব্যয়বহুল বাহারি ইফতারের আয়োজন না করে, পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, নিকটজন, গরিব মিসকিন, দরিদ্র অসহায়দের ইফতারের বিষয়ে যত্নবান ও সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে মুসাফির, পথশিশু, ছিন্নমূল ও পথিকের ইফতারের ব্যবস্থা করাও প্রতিটি সচ্ছল মুসলিমের কর্তব্য। বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্বে করোনাভাইরাসের মহামারীর সময় সরকারি নিষেধাজ্ঞায় ইফতার মাহফিল, ইফতার পার্টি নিষেধ। তাই আসুন গরিব অসহায়দের দান খয়রাত করে তাদের দিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিই। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি তৃপ্তিসহকারে পানাহার করল, অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাতযাপন করল, সে মুমিন নয় (মুসলিম) তবে আমাদের সাহরি ও ইফতারগুলো অবশ্যই হালাল উপার্জন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য হতে হবে। কেননা হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। আল্লাহ আমাদের পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারকের যথাযথ সম্মান বজায় রেখে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : গবেষক, ইমাম ও খতিব, কাওলারবাজার জামে মসজিদ দক্ষিণখান, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর