সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

নিচে নেমে যাওয়া উদ্বেগজনক

পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া জীবনযাপন একেবারেই অকল্পনীয়। পান করার জন্য চাই বিশুদ্ধ পানি। ফসল ফলানোর জন্য বৃষ্টির পানি অথবা পানি সেচ একটি অপরিহার্য বিষয়। বাংলাদেশকে বলা হয় নদীনালার দেশ। সন্দেহ নেই মিঠা পানি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। স্বল্প আয়তনের এই ঘনবসতির দেশে গত অর্ধ শতাব্দীতে ফসল উৎপাদন প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে পানি সেচের মাধ্যমে বাড়তি ফসল উৎপাদনের কারণে। কিন্তু পানি নদী-নালার এই দেশে ক্রমেই মহার্ঘ্য বস্তুতে পরিণত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির অবিবেচনা প্রসূত ব্যবহারে দেশজুড়ে ভূপৃষ্ঠে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১৫০ ফুট নিচে নেমে যাওয়ায় অকেজো হয়ে পড়েছে বেশির ভাগ হস্তচালিত নলকূপ। বেশির ভাগ এলাকায় গভীর নলকূপগুলোতে ঠিকমতো পানি উঠছে না। বৈশাখের খরতাপে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ডাসকো ফাউন্ডেশন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার বিপজ্জনক চিত্র। সমন্বিত পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় তানোরের মু-ুমালা পৌরভবনের পাশে ২০১৬ সালে ডাসকো পানি মাপার কূপ তৈরি করে। কূপ বসানোর সময় সেখানে পানির স্তর ছিল ১০০ ফুট নিচে। কূপের ভিতর ডিভাইস পাঠিয়ে গভীরতা পরিমাপ করা হতো ওই কূপটিতে। ডিভাইসটি নিচে গিয়ে পানি স্পর্শ করলেই ওপরে ডিভাইসের বেল বেজে উঠত। এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মাটির ১৫০ ফুট নিচে গিয়েও আর ডিভাইসের বেল বাজছে না। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরে পানির স্তর নেমে গেছে ৫০ ফুট। কৃষি কাজের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ ব্যবহার পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ নিষ্ঠুর বাস্তবতা শুধু বরেন্দ্র অঞ্চল নয় সারা দেশের। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের উপকূল এলাকায় লবণাক্ততার আগ্রাসন ক্রমেই বাড়ছে। যার অশুভ প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানি লবণাক্ত হয়ে পড়ায় তা পানের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। দেশের পার্বত্য অঞ্চলেও রয়েছে পানির সংকট। এ অবস্থার অবসানে ভূগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণসহ প্রাকৃতিক জলাধারের ধারণক্ষমতা বাড়ানোও জরুরি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর