শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

তপন কুমার ঘোষ

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান

সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না। খুবই কঠিন সময় পার করছে বিশ্ববাসী। কভিডের প্রথম ঢেউয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় ঢেউ। কোনো কোনো দেশে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন চিন্তায় ফেলেছে বিশ্ববাসীকে। করোনায় কাবু আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। নিকট প্রতিবেশী দেশের জটিল পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই আমাদের জন্য ভয়ের।

করোনার এক বছর পার হয়েছে। প্রতিদিন করোনায় মৃত্যুর খবর আসছে। গত বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত (৭ মে) দেশে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ হাজার ৮৩৩ জন। অনেক বরেণ্য ব্যক্তিকে আমরা হারিয়েছি। যে কোনো মৃত্যুই শোকের। আর সে মৃত্যু যদি পরিজন বা চেনাজানার মধ্যে হয় তাহলে শোকের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। স্বজনহারাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। ‘এটাই জীবনের অংশ’ ভেবে সান্ত¡না খুঁজছেন তারা।

করোনাকালে মানুষের উপার্জন কমেছে। সমীক্ষা বলছে, গত এক বছরে কাজ হারিয়েছে ৬২ শতাংশ মানুষ। কর্মহীন মানুষের আয় নেই। সঞ্চয় নেই। দিন গুজরান করতে নাভিশ্বাস উঠছে। জরিপের তথ্যানুসারে করোনাকালে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের ঋণের বোঝা বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা সঙ্গিন। অন্যের দয়ায় যাদের পেট ভরে সেই হতদরিদ্র মানুষের দীর্ঘশ্বাস দীর্ঘতর হয়েছে। ক্ষুধার জ্বালা আগুনের দহন থেকেও তীব্র। আর্থিক কষ্টে আছেন কিন্তু লজ্জায় কারও কাছে হাত পাততে পারেন না, এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। খারাপ সময় একদিন কেটে যাবে। এ দুঃসময়ে টিকে থাকাটাই মুখ্য। এ দুর্দিনে পোয়াবারো তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর। করোনাকালে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। বিজ্ঞাপন থেকে আয় বেড়েছে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর এখন সুদিন। অনলাইন শপিংয়ের দিকে ঝুঁকেছে মানুষ।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিম্ন আয়ের ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ আড়াই হাজার টাকা করে এককালীন সহায়তা দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ কৃষককে এককালীন ৫ হাজার টাকা করে নগদ দেওয়া হবে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকে ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেশের সব ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো চলমান আছে। সরকারের আর্থিক সামর্থ্যরে সীমাবদ্ধতা আছে। এটা মাথায় রাখতে হবে। সরকার তো আর গৌরী সেন নয়। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার। কেউ কেউ এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু গেলবারের মতো সাড়া এবার মিলছে না। এবার একটু অন্যদিকে তাকানো যাক। এই করোনাকালেও ঈদ উপলক্ষে নিজের ও পরিবারের জন্য দেদার খরচ করছেন অনেকে। অভিজাত শপিং মলে উপচে পড়া ভিড়। চলছে কেনাকাটার প্রতিযোগিতা। ভিড়ে উধাও স্বাস্থ্যবিধি। আমরা বেশির ভাগ ‘ভদ্রলোক’ নিজের আর পরিবার-পরিজন নিয়েই ‘বিব্রত’। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। সমাজের কিছু লোক নিঃস্বার্থভাবে মানুষের উপকার করে চলেছেন। এতেই তাদের সুখ। এখন সময় এসেছে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করানোর। আত্মজিজ্ঞাসা প্রয়োজন। নিজের কাছে প্রশ্ন করতে হবে, মানুষের এ দুঃসময়ে আমি কী করতে পারি? আমি কি তা করছি? উত্তর ইতিবাচক হলে ভালো। অভাবী মানুষের চাহিদা তো বেশি নয়। প্রাণে বেঁচে থাকার জন্য সামান্য যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু পেলেই মানুষ ধন্য ধন্য করবে। করোনায় কমবেশি সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তার পরও সামান্য কয়েক হাজার টাকা ব্যয় করার সামর্থ্য হয়তো আমাদের অনেকেরই আছে। মাস শেষে যারা নির্দিষ্ট বেতন পান তারা তুলনামূলক ভালো আছেন। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি আমরা। অভাব সামর্থ্যরে নাকি সদিচ্ছার? শুধু মৌখিক সহানুভূতিতে কাজ হবে না। কথায় চিড়ে ভিজবে না। বহুল প্রচলিত প্রবাদ, ‘আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও’।  ফেসবুকে বড় বড় বুলি আওড়ে আর মনীষীদের বাণী শেয়ার করে ‘সামাজিক দায়’ সারা যাবে না।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মেয়াদ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। কমে আসছে করোনায় সংক্রমণের হার ও মৃত্যু। ৬ মে কভিডে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ৩৭ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম। এটা চলমান লকডাউনের সুফল বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার প্রথম ধাক্কা ভালোই সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ায় টিকাকরণ কর্মসূচি হোঁচট খেয়েছে। কিন্তু সরকার বসে নেই। টিকার আকালের মধ্যে অন্যান্য উৎস থেকে জরুরিভাবে টিকা আমদানির চেষ্টা চলছে। মানুষের মনে এই প্রতীতি জন্মেছে যে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা ঠিকই সামাল দেবে সরকার। যারা টিকার কোর্স সম্পন্ন করেছেন তারা কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছেন। হয়তো ভাবছেন কিস্তিমাত করেছেন। কিন্তু টিকা নেওয়ার পরও সংক্রমিত হয়েছেন কেউ কেউ। যদিও সে হার অত্যন্ত কম। এদের অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। লকডাউন সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। বিশেষজ্ঞরা বারবার সাবধান করে দিচ্ছেন, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক. মাস্ক পরা। দুই. নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখা। তিন. ঘন ঘন সাবান-জল দিয়ে হাত ধোয়া। গা-ছাড়া দিলেই সর্বনাশ! পরিস্থিতি আবারও বেগতিক হবে। কথায় আছে, ‘সাবধানের মার নেই’ আর ‘বিপদ একা আসে না’।

লেখক : পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন।

সর্বশেষ খবর