শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মানবজীবনে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব

মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

মানবজীবনে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব

আল কোরআন নাজিলের রাত লাইলাতুল কদর। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এ কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। হে নবী! আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদরের মর্যাদা কত বেশি? কদরের এক রাত হাজার মাসের চেয়েও বেশি মর্যাদামন্ডিত। এ রাতে ফেরেশতাকুল এবং রহু (জিবরাইল) নাজিল হয় তাদের প্রভুর নির্দেশ নিয়ে। সে রাতে ফজর পর্যন্ত অনাবিল শান্তি ও কল্যাণ বিরাজ করে।’ সুরা কদর, আয়াত ১-৫।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আল কোরআনে পূর্ণ একটি সুরা নাজিল হয়েছে। হাদিসের কিতাবে অর্ধশতের বেশি সহি হাদিস রয়েছে এ রাতের ফজিলত ও আমল সম্পর্কে। এ রাতটি রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ রাতকে পাওয়ার জন্যই ইতিকাফের বিধান। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতে মশগুল থাকবে তার আগের জীবনের সব গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন।’ বুখারি, মুসলিম। এ রাতের অশেষ ফজিলত থেকে যেন উম্মত বেখবর না থাকে তাই রসুল (সা.) নিজে ইবাদত করে উম্মতদের শিখিয়েছেন। আমাদেরও উচিত এ বরকতপূর্ণ রাত থেকে পেয়ালা ভরে বরকতের মধু পান করা। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকে তাঁর ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। এ সময় তিনি এত বেশি ইবাদতে মগ্ন থাকতেন যে আর কখনো এভাবে কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতে তাঁকে দেখা যায়নি।’ বুখারি, তিরমিজি। অন্য বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশকে রসুল (সা.) কোমর বেঁধে ইবাদত করতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তাঁর পরিবারের লোকজনকেও জাগিয়ে তুলতেন।’ বুখারি, মুসলিম। বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় লাইলাতুল কদর হয়। ইমাম আবু হানিফা (রহ.)সহ সুন্নিয়াতের বড় একদল আলেম খুব দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে মনে করেন, ২৬ তারিখ দিবাগত রাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তারা এও বলেছেন, অন্য রাতেও লাইলাতুল কদর হতে পারে। হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে জানানো হয়েছিল লাইলাতুল কদর কবে, কখন। আমি তোমাদের বলতে আসব এমন সময় দেখি দুজন ঝগড়া করছে। আর আমাকে লাইলাতুল কদরের সঠিক তারিখটি ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা কল্যাণ মনে করেছেন তাই কদরের রাত গোপন রেখেছেন। অনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এতে শেষ দশকের প্রতি বেজোড় রাতেই ইবাদত করার সুযোগ রয়ে গেল। যদি একটি নির্দিষ্ট রাত কদর হতো তবে কোনোক্রমে ওই রাতে ইবাদত মিস হয়ে গেলে আফসোসের সীমা থাকত না। শুকরিয়া এখন আর সেই আফসোসে পড়তে হচ্ছে না উম্মতে মুহাম্মাদীকে।’ তাফসিরে মাজহারি। তাফসিরে তাবারিতে ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, লাইলাতুল কদর উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য অনেকটা বোনাসের মতো। অবারিত সুযোগও বলা যায়। সাহাবিরা ভাবতেন, আগের উম্মতরা দীর্ঘ হায়াত পেত। বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করত। আমাদের এ অল্প হায়াতে আমরা কীভাবে এত বেশি ইবাদত করব? কীভাবে আল্লাহর সন্তোষ হাসিল করব?

সাহাবায়ে কিরামদের এসব চিন্তার কারণেই আল্লাহতায়ালা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে সুরা কদর নাজিল করেন। আল্লাহতায়ালা বলে দেন, এই এক রাত ইবাদত করলে তোমাদের জীবনের গুনাহ তো ক্ষমা হবেই, একই সঙ্গে হাজার মাসের চেয়েও বেশি ইবাদতের সওয়াব তোমাদের আমলনামায় লেখা হয়ে যাবে। তাফসিরে তাবারি। আমরা অবশ্যই লাইলাতুল কদরের বরকত হাসিলের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। নিজেরা রাত জেগে ইবাদত করব। স্ত্রী-সন্তানকেও ইবাদত করতে উৎসাহ দেব। এ রাতে বেশি বেশি এ দোয়া পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন রসুল (সা.)। ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। আমাকে ক্ষমা করুন।’ বুখারি।

করোনাভাইরাসের এ মহামারীতে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি জিকির-আজকার, দরুদ-সালাম পড়ার মাধ্যমে আমরা এ মহান রাতটি উদ্যাপন করব। আল্লাহতায়ালা আমাদের লাইলাতুল কদর নসিব করুন।

 

লেখক : খতিব, মণিপুর বাইতুল আশরাফ জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর