সোমবার, ১০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ আমাদের সব রোজা কবুল করুন

মো. আবু তালহা তারীফ

হে আল্লাহ আমাদের সব রোজা কবুল করুন

আমরা রমজান শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি। বিদায় নিতে যাচ্ছে রহমত মাগফিরাত নাজাতের এই মহিমাময় রমজান। এই বিদায় যেন আমাদের শেষ বিদায় না হয় সেই হায়াত বৃদ্ধির দোয়া করি। আমরা শেষ সময়ে প্রতিটি কাজ অতিরিক্তভাবে দ্রুতগতিতে করি। যেমনটি পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার আগে সতর্কীকরণ ঘণ্টা দেওয়া হলেই আমাদের লেখার গতি বেড়ে যায়। আজ ঠিক তেমনি রমজানে সতর্কীকরণ ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। নাজাতের সূর্য অস্তমিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিদায় নেবে মাহে রমজান। এ জন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাতের দশক শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমলে মনোনিবেশ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যখন রমজানের শেষ দশ দিন আসত, নবীজি তখন রাত জাগরণ করতেন, কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন। পরিবারের সদস্যদের জাগ্রত রাখতেন। সহিহ বুখারি।

মাহে রমজান এসেছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রহমত ও ক্ষমা করার এক সুযোগ নিয়ে। এখন আমাদের গুনাহ কতটুকু ক্ষমা হয়েছে এটাই আসল বিষয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে রমজান পেয়েও গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না তার জন্য ধ্বংস। একদা এক দিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন আমিন। পরের সিঁড়িতেও পা রেখে বললেন, আমিন। আমিন বললেন, তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও। আমিন বলার ব্যাপারে সাহাবিরা জানতে চাইলে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিবরাইল এসেছে আমার কাছে বলল, হে আল্লাহর নবী! তিন পোড়া কপালের জন্য এখন আমি বদদোয়া করব, প্রতিটি দোয়া শেষে আপনি আমিন বলবেন। অতঃপর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি, জিবরাইল বলল, বৃদ্ধ বাবা-মাকে পেয়েও যে জান্নাত অর্জন করতে পারল না তার জন্য ধ্বংস। আমি বললাম, আমিন। দ্বিতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখি, জিবরাইল বলল, যে আপনার নাম শুনবে কিন্তু দরুদ শরিফ পড়বে না, তার জন্য ধ্বংস। আমি বললাম, আমিন। আর যে রমজান মাস পাবে কিন্তু নিজের গোনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে জান্নাত উপযোগী মানুষ বানাতে পারবে না, তার জন্যও ধ্বংস। তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় এ দোয়া করল জিবরাইল। আমি বললাম, আমিন। (বুখারি)। রমজান যেভাবে এসেছিল ঠিক সেইভাবে বিদায় হয়ে যাচ্ছে। আমরা কি রমজানে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছি? না কি আগের অবস্থায় রয়েছি।  উত্তর তো আমাদের কাছেই। রমজানের রোজা দ্বারা আমাদের ভিতরজগৎ কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানের করোনার এমন ভয়াবহ অবস্থায় আরও একটি রোজা আমরা পাব কি-না। আমরা বলতে পারি না। এমনটি হতে পারে আজকের সাহরি ও ইফতার আমার জীবনের জন্য শেষ। চিন্তা করে দেখুন গত রমজানে আমাদের পরিবারের আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী ও পরিচিতদের মধ্য থেকে আজ অনেকেই নেই। আমিও আগামী বছরে রমজান পাব কি? যদি পাই তাহলে আলহামদুলিল্লাহ, অন্যথায় এবারের রমজানেই হবে জীবনের শেষ। আহ্ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে,  চলে যেতে হবে মাটির গৃহে। আজ আমরা যে সময়টুকু পাচ্ছি আসুন আল্লাহকে খুশি করি। বাকি সময়টুকু আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহকে পাওয়ার সাধনা করি। জীবনের গুনাহ মাফ করিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। সবার জন্য দোয়া করি। আর বলি, হে আল্লাহ আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করুন, ভালো রাখুন আমাকেসহ সবাইকে, রসুলের প্রেমিক বানিয়ে রোজাসহ সব ইবাদত কবুল করে নিন। আমিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর