সোমবার, ১৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার আগমন বাঙালির প্রাণে স্পন্দন

মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু

শেখ হাসিনার আগমন বাঙালির প্রাণে স্পন্দন

শেখ হাসিনা, আপনার বেদনা আমি জানি,

আপনার প্রত্যাবর্তন আজও শেষ হয়নি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়িতে

আপনি পা রেখেছেন মাত্র।

আপনার পথে পথে পাথর ছড়ানো।

পাড়ি দিতে হবে দুর্গম গিরি,

কান্তার মরুপথ।

-কবি নির্মলেন্দু গুণ

এই পথ শেষ হয় না, শেষ হওয়ার নয়। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বে অকুতোভয় নেতার অভাব হয়তো কখনো ছিল না; কিন্তু এটাও ঠিক যে, জাতির ক্রান্তিলগ্নে আলোকবর্তিকা হয়ে বঙ্গবন্ধুর ধীমান নেতৃত্বে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কিন্তু ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারল না জাতি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করল স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। জাতি হতাশায় নিমজ্জিত হলো। বঙ্গবন্ধুর আরদ্ধ স্বপ্ন, গণতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বাংলাদেশ গঠন করার প্রক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। এমন এক হতাশগ্রস্ত জাতিকে যখন ভরসা দেওয়ার মতো কেউ রইল না, ঠিক তখনই ভরসাস্থল হয়ে ক্ষত পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি এলেন, জয় করলেন। তিনি জাতিকে ভরসা দিয়েছিলেন, এখনো দিচ্ছেন। তিনি জানেন জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে ক্ষমতার মধ্যমঞ্চ থেকে কখন কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়। এসব গুণাবলিই তাকে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের আগে-পরে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে, রোল মডেলে পরিণত করেছে দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে।

তারিখটা ছিল ১৭ মে ১৯৮১, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৮। রবিবার। রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতায় তখন খুনি মোশতাকের সহচর জেনারেল জিয়া। তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে আশার সাহসী সিদ্ধান্ত নিলেন। কেননা বঙ্গবন্ধুর আরষ্ট স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাকে দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটল তিনি যখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হলেন।

সেদিন প্রকৃতি ছিল বৈরী। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি। যদিও তাতে যায়-আসেনি! ঝঞ্ঝা-দুর্যোগ সেদিন শেখ হাসিনার আগমন তো বটেই, গণতন্ত্রকামী লাখো মানুষের মিছিলও গতিরোধ করতে পারেনি। তার আগমনে যেন প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেল, ধরণী হলো সিগ্ধ। এদিন গ্রাম-শহর-নগর-বন্দর থেকে রাজধানীতে ছুটে এসেছিল অধিকারবঞ্চিত লাখ লাখ মানুষ। উদ্দেশ্য, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র আশার প্রদীপ শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানান। আমিও আমার শত শত নেতা-কর্মীসহ ছিলাম সেই মিছিলে। কেননা আমি তখন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।

১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ঘিরে আপামর জনগণের উচ্ছ্বাস কেমন ছিল? তার একটি খন্ডচিত্র পাওয়া যায় ১৯৮১ সালের ১৮ মে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকে। সেখানে লেখা হয় : “... দীর্ঘ ছ’বছর বিদেশে অবস্থানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সতরোই মে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেন তাদের নেত্রীকে। মধ্যাহ্ন থেকে লক্ষাধিক মানুষ কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করবে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিমানবন্দরে কোনো নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ...”

এদিন দুপুরের আগে থেকেই বিমানবন্দর থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে মানুষের ভিড় ছিল। বিকাল সাড়ে ৪টায় সত্যিই যখন ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের ৭৩৭ বোয়িংটি আকাশে দেখা গেল, তখন সব শৃঙ্খল ভেঙে হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় বিমানটিকে। উদ্দেশ্য- শেখের বেটিকে এক নজর দেখা। সব মিলিয়ে সে সময় পুরো বিমানবন্দর এলাকা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। বলা হয়ে থাকে, বঙ্গবন্ধুর ১৯৭২ সালের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের পর সমসাময়িক রাজনীতিতে এ ধরনের ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। সাদা-কালো রঙের প্রিন্টের শাড়ি পরিহিতা শেখ হাসিনা যখন ৪টা ৩২ মিনিটে সিঁড়ি দিয়ে বিমান থেকে সজ্জিত ট্রাকে নামছিলেন; তখন লাখো জনতার কণ্ঠে গগনবিদারী সেøাগান উচ্চারিত হচ্ছিল ঠিক এভাবেই- ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব’, ‘শেখ হাসিনা, স্বাগত শুভেচ্ছা’ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। বিমান থেকে ভিআইপি লাউঞ্জ পর্যন্ত হাসিনাকে নিয়ে আসতে ট্রাকটির ১৫ মিনিট সময় লাগে। সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিবেশ তৈরি হয়। এ পরিবেশ উচ্ছ্বাসের, এ পরিবেশ আনন্দে অশ্রু ফেলার। বিমান থেকে নামার সময় দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক যখন শেখ হাসিনার গলায় মালা দিচ্ছেলেন, তখন তিনি অঝোরে কাঁদছিলেন। কলকাতা বিমানবন্দরে এবং ঢাকা আসার পথেও বেশ কয়েকবার কেঁদে ফেলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

বিমানবন্দর থেকে নামার পর প্রায় দীর্ঘ তিন ঘণ্টাব্যাপী মানুষের অভিনন্দন গ্রহণ শেষে ভিড় ঠেলে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সভামঞ্চে পৌঁছান বাংলাদেশের কান্ডারি। তখনো চারদিক অন্ধকার, মুষলধারে বৃষ্টি। একদিকে প্রবল বর্ষণ, সেই সঙ্গে কালবৈশাখী। এরই মাঝে ট্রাকে ও রাস্তার দুই পাশের জনতার কণ্ঠে গগনবিদারী সেøাগান, ‘মাগো তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব’। লাখো জনতার উপস্থিতিতে আয়োজিত সমাবেশে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ তার ভাষায় “আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যে ‘সিস্টেম’ (পদ্ধতি) চালু করতে চেয়েছিলেন, তা যদি বাস্তবায়িত হতো তাহলে বাংলার মানুষের দুঃখ আর থাকত না। সত্যিকার অর্থেই বাংলা সোনার বাংলায় পরিণত হতো।” শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমি জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু পাওয়ার নেই। সব হারিয়ে আমি এসেছি আপনাদের পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য।’

‘আমি বঙ্গবন্ধু-হত্যাসহ পরবর্তীকালের বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বিচার চাই। বিচার চাই বাংলার জনগণের কাছে, আপনাদের কাছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বিচার করবে না। ওদের কাছে বিচার চাইব না। আপনারা আমার সঙ্গে ওয়াদা করুন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করব।’

বক্তৃতাদানের একপর্যায়ে নিজেকে আর সংবরণ করতে পারেননি শেখ হাসিনা। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ‘আজকের জনসভায় লাখো চেনা মুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।’

এই ছিল সব আপনজন হারিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্মভূমিতে ফেরা। কী হতো তিনি দেশে না ফিরলে? বর্তমান বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থা, অনন্যসাধারণ দেশের উন্নয়ন ও বিশ্বে এর সমাদৃত অবস্থানের দিকে তাকালেই তা সহজে অনুধাবন করা যায়।

দুই. জীবনের বড় একটা অংশ দুঃসাহস দেখিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। পথের পাথর ডিঙিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন সব সময়। এখনো যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এই দেশে প্রত্যাবর্তন। নিজ ভূমিতে আপনজন নেই, এমনকি থাকার ঘরও নেই; এমন এক পরিস্থিতিতে দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে বিদেশের মাটিতে ফেলে এসে বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন চলার পথ সরু হয় না; তাতে বাঁক থাকে, খরস্রোত-চোরাস্রোত থাকে। আর এ কারণেই জীবনের ঝুঁকি, মৃত্যুঝুঁকি, চড়াই-উতরাই, ঘাত-প্রতিঘাত, কারাবরণ কোনো কিছু তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে যখন তিনি দেশে ফেরেন, তার দেড় সপ্তাহ আগে বিশ্বখ্যাত নিউজ উইক পত্রিকা তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল। যাতে তার দেশের ফেরার পর জীবনঝুঁকি ব্যাপার স্পষ্টত উল্লেখ ছিল। ওই সংবাদে শেখ হাসিনা নিজেও বলেছিলেন, তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমনকি যে সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’ ‘প্রার্থনা : শেখ হাসিনার জন্য’ লেখায় এ কথাটিই এভাবে লিখেছেন কবি সুফিয়া কামাল। “...শেখ হাসিনা মৃত্যুর ভয়ে পশ্চাৎপদ হননি। সাহসের সাথে সংগ্রামে এগিয়ে অগ্রবর্তিনী হয়ে আমাদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন আর ঘাতক মূষিক গোপন থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পদদলিত হওয়ার আশঙ্কায় কৃমিটি হয়ে আত্মগোপন করছে।” (‘তিমির হননের নেত্রী’, পৃ. ৯)।

পঁচাত্তর-পরবর্তী জাতির ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে পিতামাতা-ভাইবোন ছাড়াও তিনি যেভাবে ‘একলা চলো’ নীতিতে সূচনা করেছিলেন, সত্যিই তা সহজ-স্বাভাবিকভাবে ভাবা যায় না। হয়তো এ কারণেই দিনটাকে অন্যভাবে দেখতে চেয়েছেন সব্যসাচী লেখক ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক। ‘শেখ হাসিনার জন্মদিনে : ২০০৯’-এ তিনি লিখেছেন, ‘সকলেই জন্ম নেয় কেউ কেউ জন্মলাভ করে, অনন্য অর্জন তার।’ ‘মানুষেরই মুক্তিলগ্নে জন্মদিন সে ছিল আপনার, উজ্জ্বল অক্ষরে সেটি লেখা আছে ইতিহাসপটে।’ অর্থাৎ ১৭ মে-কে শেখ হাসিনার জন্মদিন হিসেবে আখ্যায়িত করে গেছেন প্রয়াত এই লেখক।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ও ১৯৮১ সালের ১৭ মে। একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন; অন্যটি কন্যা শেখ হাসিনার মাতৃভূমিতে ফেরা। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সদ্য স্বাধীন বাঙালি জাতির কাছে ছিল একটি বড় প্রেরণা। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পরও বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে বাঙালি জাতি যখন কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি; তখন পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর শেখ হাসিনার দেশে ফেরার প্রেক্ষাপটটি ছিল বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে শামিল হওয়া। ১৮ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টেলিভিশনে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের আপনি কি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, এটা জনগণের ওপর নির্ভর করবে। আমাদের জনগণ যদি চায়, তবেই হতে পারি। এটা জনগণই ঠিক করতে পারে। তবে আমি জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলতে চাই। আমাদের জনগণ খুবই গরিব, তারা সমস্যায় জর্জরিত। এ-মুহূর্তে তাদের রাজনৈতিক অধিকার নেই। তাদের কথা বলার অধিকার নেই। তারা অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে। তাই আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। কারণ আমার পিতার একটা স্বপ্ন ছিল : তিনি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। আমার আদর্শ একই রকম এবং আমার বাবাকে অনুসরণ করতে চাই।

অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও একটি প্রশ্নে উভয়ের অবস্থান ছিল এক ও অভিন্ন। আর তা হলো- ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রার মাধ্যমে জনগণের ভাগ্যোন্নোয়ন’। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে হাত দিয়ে দেশকে স্বনির্ভরতা এনে দিয়েছিলেন; আর শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি মৌলিক অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করেছিলেন। উভয়ের অপেক্ষায় বাংলার লাখ লাখ মানুষের অবস্থানের মিলটাও চমৎকার। আন্তর্জাতিক চ্যানেল এবিসি টিভির সম্প্রচার মতে, ‘শেখের বিমানটি ঢাকায় অবতরণের আগে আকাশ থেকেই তিনি তাকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমাণ আনুমানিক ১০ লাখ লোককে দেখতে পান।’ অন্যদিকে শেখ হাসিনার রাজধানী ঢাকার সমাগমের সংক্ষেপ চিত্র তুলে এম এ ওয়াজেদ মিয়া তার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে লিখেন, ‘ওই দিন তাকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য ১০-১২ লাখ লোকের সমাগম হয়েছে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা সূত্রে বলা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মতে, ওই দিন ঢাকায় অন্যূন ১৫ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল।’

শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশে তো বটেই, গোটা বিশ্বের রোল মডেল। তিনি শুধু রাজনীতিতেই স্থিতিশীলতা আনেননি, নারীর অধিকার, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রক্ষায় গোটা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছেন, হচ্ছেন। সৎ-সততা ও বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী-সমাজের মাঝেও আজ তার অবস্থান। যে আশা ও ভরসা দিয়ে চার দশকের বেশি সময় আগে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন, তা আজ শতভাগ বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছেন। তিনি এখন জনগণের কাছে নন্দিত-সমাদৃত।  ১৭ মে ঐতিহাসিক দিবসে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ খবর